সমকালীন প্রতিবেদন : স্থলপথে ভারত থেকে বাংলাদেশে সুতো আমদানি বন্ধ করার নির্দেশ দিল বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর ফলে এখন থেকে ভারতের কোনও স্থলবন্ধর দিয়েই ভারতের সুতো বাংলাদেশে রপ্তানি হবে না। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এই নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নির্দেশিকা জারির ফলে ভারতের রপ্তানিকারি সংস্থাদের কিছুটা হলেও ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এতোদিন মূলত বাংলাদেশের বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ভারতের সুতো আমদানি করল বাংলাদেশের আমদানিকারি সংস্থাগুলি। স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র শিল্পের অন্যতম এই কাঁচামাল আমদানি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়ছিলেন সেদেশের বস্ত্রশিল্প মালিকেরা। এমনই দাবি করে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে এই সুতো আমদানি বন্ধ করার দাবি জানায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন।
এর ঠিক এক মাস পর একটি চিঠি দিয়ে পোশাকশিল্পে বাংলাদেশে তৈরি সুতোর ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পোশাকশিল্পের জন্য ব্যবহৃত সুতো আমদানি বন্ধ করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। তার প্রেক্ষিতেই অবশেষে নতুন এই নির্দেশিকা জারি করল বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতো আমদানি করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা থাকছে না।
জানা গেছে, চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত সুতোর দাম প্রায় একইরকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে যাওয়া ভারতীয় সুতোর দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আমদানি করা সুতো চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতো উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। সেই কারণেই এই আপত্তি ওঠে।
ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতো কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতো তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এই কারণেই দেশি সুতোর পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতো বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পে বেশি ব্যবহার করা হয়। সেই কারণে বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি করেছিল বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের।
উল্লেখ্য, দিনকয়েক আগেই তৃতীয় দেশে পণ্য রফতানির জন্য বাংলাদেশকে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। সেখানে বাংলাদেশ ভারতের শুল্ককেন্দ্র ব্যবহার করে তৃতীয় কোনও দেশে পণ্য রফতানি করতে পারবে না। এক্ষেত্রে দিল্লির যুক্তি, বাংলাদেশকে ওই সুবিধা দেওয়ার ফলে ভারতীয় রপ্তানিকারি সংস্থাগুলি সমস্যায় পড়ছিল।
সেই কারণেই বাংলাদেশকে ওই সুবিধা দেওয়া বন্ধ করা হয়। তবে এই সিদ্ধান্তের জন্য ভারত হয়ে নেপাল এবং ভুটানে পণ্য রফতানি করতে বাংলাদেশের কোনও সমস্যা হবে না। আর ঘটনাচক্রে, ভারতের ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েকদিন পরেই এই পদক্ষেপ করল বাংলাদেশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন