সমকালীন প্রতিবেদন : এবার সাইবার অপরাধীদের টার্গেট হোয়াটসঅ্যাপ। কিভাবে করা হচ্ছে প্রতারণা? হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কিন্তু এখন টাকাপয়সার লেনদেনও হয়। তাই প্রতারকদের হাতে আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট পড়লেই হতে পারেন আপনি সর্বশান্ত। তাই সময় থাকতে সতর্ক হোন। আজকের এই প্রতিবেদনে কিভাবে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট সেফ রাখবেন, সেটাই জানাবো। পয়েন্টগুলো খুব ইম্পরট্যান্ট। সবকিছু লুকিয়ে আছে সেটিংসেই।
অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও থেকে শুরু করে নানা ধরনের গোপন, পার্সোনাল ইনফো প্রকাশের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনা, ভুয়ো অ্যাকাউন্টে আর্থিক প্রতারণা, হোয়াটসঅ্যাপের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে সেখানে প্রতারণার ঘটনা দিন কে দিন বেড়েই চলেছে। আর এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে চিন্তার কারণ। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা দফতর বারবার সতর্ক করছে। অলরেডি জানিয়ে দিয়েছে, সাইবার অপরাধীদের নতুন নিশানা হোয়াটসঅ্যাপ। কারণ এই প্ল্যাটফর্মেই সবচেয়ে বেশি ব্যক্তিগত তথ্যের আদানপ্রদান হয়।
হোয়াটসঅ্যাপ থেকে এখন টাকাপয়সার লেনদেনও সম্ভব। তাই সব মিলিয়েই বিপদ বাড়ছে। সে ক্ষেত্রে একটু চোখ কান খোলা রাখতে হবে। আর হোয়াটসঅ্যাপকে সেফ রাখার কয়েকটা প্রসেস আপনাকে জেনে নিতে হবে। প্রথমেই সেই দিকটা আপনাকে খেয়াল হবে। হোয়াটসঅ্যাপের অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার কয়েকটি উপায়–
১) হোয়াটসঅ্যাপ আপডেট করতে হবে। এর পর সেটিংসে গিয়ে অ্যাকাউন্ট অপশন থেকে টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন সিলেক্ট করে নিন। এর জন্য নিজের ইমেল আইডি লিঙ্ক করাতে হবে বা পাসকোড সেট করতে হবে। এমন পাসকোড সেট করতে হবে, যাতে কোনওভাবেই অপরাধীরা আপনার সুরক্ষাবলয় ভেদ করতে না পারে। মোদ্দা কথা হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষাবলয় কতটা মজবুত হবে সেটা ঠিক করবেন আপনি।
২) আর একটা ভুল একদম করবেন না। একাধিক ডিভাইসে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েব খুলে রাখবেন না। ইউজ করার পর প্রতিটি ডিভাইস থেকে অ্যাকাউন্ট লগ আউট করতে হবে। এটা মাস্ট।
৩) স্ক্রিন লক রাখুন। কিভাবে? জেনে নিন। কম্পিউটারে খোলা হোয়াটসঅ্যাপ পেজটির ডান দিকে একেবারে কোণে তিনটি ডট থাকে। সেখানে ক্লিক করতে হবে। সেখানে রয়েছে ‘সেটিংস’ মেনু। সেখান থেকে ‘প্রাইভেসি’-তে গিয়ে ‘স্ক্রিন লক’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। এবার স্ক্রিনে একটি মেসেজবক্স ফুটে উঠবে। সেখানে ক্লিক করে নিজের পছন্দমতো পাসওয়ার্ড দিন। এভাবে স্ক্রিন লক করে রাখতে পারবেন। তাতে কেউ আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকে পড়লেও চ্যাটবক্স ব্যবহার করতে পারবেন না।
৪) হোয়াটসঅ্যাপ অবশ্যই পাসওয়ার্ড অথবা ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস লক সিস্টেম দিয়ে সেফ রাখার চেষ্টা করুন, যাতে কেউ আপনার ফোন হাতে পেলেই হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট না খুলে ফেলতে পারেন। তাহলে কিন্তু ঘটে যেতে পারে বড়সড় বিপদ।
৫) এরমধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সফটওয়্যার আপডেট। হ্যাঁ, হ্যাকড হওয়া থেকে বাঁচতে হলে সবসময়ে সফটঅয়্যার আপডেট করে রাখতেই হবে। নামী সংস্থার অ্যান্টিভাইরাস ইনস্টল করে রাখতে হবে ফোনে। নতুন কোনও অ্যাপ ডাউনলোডের সময়ে ভালো করে স্ক্যান করে নিতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপে অচেনা নম্বর থেকে আসা লিঙ্ক বা ছবিতে ভুলেও ক্লিক করবেন না। কারণ, এসবের মাধ্যমেও ‘ম্যালঅয়্যার’ ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। তাই যা করবেন সবটাই খুব সাবধানে, ভালো করে দেখে শুনে।
৬) আর পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার চক্করে নিজের বিপদ ডেকে আনবেন না। হোয়াটসঅ্যাপে কখনোই পাবলিক ওয়াইফাই দিয়ে ইউজ করবেন না। ফ্রি ওয়াইফাইয়ের সঙ্গে কানেক্টেড হলে সেই ফোনের ব্যক্তিগত তথ্য হ্যাকারেরা খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারে। তা ছাড়া পাবলিক চার্জিং স্টেশনে ফোন চার্জ না করাই ভালো। সেখানেও লুকিয়ে রয়েছে বিপদ।
হয়তো অনেকেই বিষয়টার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না। কিন্তু এই হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাকিং এর বিষয়টা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম কোঅর্ডিনেশন সেন্টার’ এর তথ্য বলছে, প্রতারণার অভিযোগে গত বছর ডিসেম্বরে ৬০ হাজারের বেশি হোয়াট্সঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হয়েছিল। তাই যখন সাইবার অপরাধের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে, ডিজিটাল দুনিয়ায় মানুষ যখন প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছেন, কত আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তার যখন হিসেবও নেই, তখন হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারের বিষয়টা নিয়ে আগেভাগেই সতর্ক হওয়া দরকার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন