সমকালীন প্রতিবেদন : সিন্ধু নদের জল কি সত্যিই আটকে দিতে পারবে ভারত? সিন্ধুর জল প্রবাহের পথ ঘুরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের থেকে কেড়ে নিতে পারবে তাদের লাইফলাইনকে? সত্যিই কি শুকিয়ে মারা পড়বে পাকিস্তান? সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা কথা খুব ঘুরছে। অনেকেই বলছেন "সবটাই আইওয়াশ"! কিন্তু আসল সত্যিটা কি? পাকিস্তানের পরিস্থিতিই বা কতটা ভয়ংকর হতে পারে? খরা নাকি বন্যা? কোন ভয়ংকর বিপদের মুখোমুখি এবার পাকিস্তান? জানুন আসল ফ্যাক্ট।
ভারত পাকিস্তান দুটো দেশ দুটো যুদ্ধের ধাক্কা সামলেও টিকিয়ে রেখেছিল ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি। কিন্তু কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করায় ভারতবাসীর একটা বড় অংশের মনে প্রশ্ন জাগছে, সিন্ধুর জল প্রবাহকে ঠিক কোন পদ্ধতিতে আটকানো হবে বা রোধ করা হবে?
৯ বছর ধরে আলোচনার পর বিশ্ব ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে দুটো দেশের মধ্যে যে সিন্ধু চুক্তি হয়েছিল তার আওতায় ৬টি নদী। এর মধ্যে ভারতের অংশে ৩ টি। আর পশ্চিম অববাহিকার সিন্ধু, ঝেলাম ও চেনাব নদীর ৮০ শতাংশ পড়েছে পাকিস্তানের ভাগে। কিন্তু তারপরেও এত বছর ধরে পাকিস্তান ভারতের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে, জলপ্রবাহ কমানোর দায় চাপিয়ে দিয়েছে। আর ভারত সিন্ধুর জল পাকিস্তানকে দিয়ে এসেছে।
কিন্তু এবার যখন হিন্দু পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে মোদি সরকার সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের কথা ঘোষণা করলেন তখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভরা মরসুমে পাকিস্তানের অংশের পশ্চিমাঞ্চলীয় নদীগুলোর হাজার হাজার কোটি ঘনমিটার জল ধরে রাখা বা অন্যদিকে প্রবাহিত করা ভারতের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। কারণ এত বিশাল পরিমাণ জল ধরে রাখার মতো অবকাঠামো কিংবা বিস্তৃত খালের অভাব।
আসলে ভারতের বেশিরভাগটাই ‘রান অফ দ্য রিভার’ প্রজেক্ট, যা প্রবাহিত জলের গতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। অতএব এটা পরিষ্কার, নদীর গতিপথ পরিবর্তনের মতো বিশাল খাল বা জলাধার গড়ে তোলার বিষয়টা নিয়ে ভারতকে ভাবতে হবে। আর বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, কঠিন ভূ-প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে নতুন বাঁধ বা প্রকল্প বাস্তবায়নেও দেরি হবে।
কিন্তু তাতে কি? ভারতের হুঁশিয়ারি বৃথা যায় না। অলরেডি ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা জল ধরে রাখার জন্য অবকাঠামো তৈরির কথা বলছেন। তবে চুক্তির শর্ত দেখিয়ে পাকিস্তান গোটা বিষয়টির বিরোধিতা করছে। আসলে বিষয়টা বুঝতে হবে, পাকিস্তানের চাষাবাদের ৮০ শতাংশ এবং এক-তৃতীয়াংশ জলবিদ্যুৎ, সবটাই সিন্ধুর ৮০ শতাংশ জলের ওপর নির্ভরশীল।
আর তাই ভারত সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের কথা বলতেই ভয় পেয়ে গেছে পাকিস্তান। এর পেছনে কিন্তু যথেষ্ট লজিক আছে। ভালো করে ভেবে দেখলে বোঝা যাবে বর্ষাকালে অতিরিক্ত জলের প্রবাহ রোধ করা অসম্ভব হলেও শুষ্ক মরসুমে যখন জলের চাহিদা বেশি, তখন ভারত চাইলে যে অবকাঠামো আছে সেটাকেই কাজে লাগাতে পারবে।
আর তাতে কিছুটা পানীয়জল ধরে রাখতে পারলে পাকিস্তানে কৃষি ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রভাব ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি কোন দিকে এগোচ্ছে, দুটো দেশের সম্পর্কের সমীকরণ কোন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, এই সবকিছুর উপর নির্ভর করছে সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের পরিণতি ও প্রভাব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন