সমকালীন প্রতিবেদন : পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় বড়সড় ট্যুইস্ট! ২১ হাজার কোটি টাকার হেরোইনই কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে। এনআইএর তদন্তে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য। গুজরাতের মুন্দ্রা বন্দর থেকে ড্রাগ বাজেয়াপ্ত হওয়ার পরই পর্দা ফাঁস মূলচক্রী পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এর। যত সময় যাচ্ছে ততই পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার গোড়া পর্যন্ত যাওয়ার চেষ্টায় ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। আর তাতেই এনআইএর হাতে উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য।
জম্মু ও কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার পহেলগাঁও সন্ত্রাসবাদী হামলার নেপথ্যে যে ষড়যন্ত্র রয়েছে তা শুধু গভীর না, মারাত্মকও। কাশ্মীরের এই সাম্প্রতিকতম জঙ্গিহানার ঘটনার শিকড় গুজরাতের সঙ্গে সংযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি গুজরাতের মুন্দ্রা বন্দর থেকে ২১ হাজার কোটি টাকার হেরোইন বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এই মামলার তদন্তকারী এনআইএ সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, বাজেয়াপ্ত হওয়া ২৯৮৮.২ কেজি মাদক গুজরাতের মুন্দ্রা বন্দর দিয়ে দেশের ভিতরে পাচারের চেষ্টা চলছিল। সুপ্রিম কোর্টকে সেই তথ্যই জানিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা মানে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা এনআইএ।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, গোটা পরিকল্পনার ‘মূলচক্রী’ পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ‘ইন্টার সার্ভিসেস ইনটেলিজেন্স’ বা আইএসআই। শুধু তাই নয় শীর্ষ আদালতকে দেওয়া হলফনামায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ইরানি মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় আফগানিস্তানের মাদক পাচারকারীদের থেকে ওই হেরোইন ভারতের বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল আইএসআই। আর তাই হিন্দুকুশের কোলের দেশ থেকে পারস্য উপসাগর হয়ে ওই মাদক পশ্চিম ভারতের মুন্দ্রা বন্দরে পাঠায় ইসলামাবাদ। এটা তো সবে শুরু! বাকিটা জানলে হতভম্ব হয়ে যাবেন।
এমআইএর দাবি, প্ল্যান অনুযায়ী ট্যালকম পাউডারের নাম করে অতি গোপনে ওই হেরোইন আমদানি করে এদেশের পাচারকারীরা। দিল্লির নেব সরাই এবং আলিপুরের দুটো গুদামে সেগুলো সংরক্ষণ করারও কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের তৎপরতায় ফাঁস হয়ে যায় ষড়যন্ত্র। যদিও ভারতীয় পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করা হেরোইনের অর্থ জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে দেয় পাক গুপ্তচরেরা। ফলে কাশ্মীরে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে টাকার অভাব হয়নি জঙ্গিদের।
আর এটা প্রথম নয়। ট্যালকম পাউডারের নাম করে আগেও বৈধ নথি দেখিয়ে এদেশে হেরোইন পাচার করেছে ইসলামাবাদ। কিন্তু সেই ছক ভেস্তে যাওয়ায় অত্যন্ত গোপনে অপারেশন চালাচ্ছিল আইএসআই। আগে শুধুমাত্র পঞ্জাবে মাদক পাঠাত ইসলামাবাদ। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতোটাই কঠোর যে, গুজরাত সহ পশ্চিম ভারতের উপকূলকে বেছে নিয়েছে আইএসআই। তবে শুধু টাকার জোগান নয়, এনআইএর মতে, ওদের লক্ষ্য ভারতের যুবসমাজকে মাদকাসক্তির দিকে ঠেলে দিয়ে দেশকে ভিতর থেকে একেবারে খোখলা করে দেওয়া৷ অতএব ভারতকে একদম ভেতর থেকে একটু একটু করে শেষ করে দেওয়ার টার্গেট আইএসআই এর।
ইতিমধ্যেই মুন্দ্রার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া কবীর তলোয়ার সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আর্জি জানিয়েছে। এনআইএর অভিযোগ, কবীর তলোয়ার এই মাদক সিন্ডিকেটের বড় পার্ট। অন্যদিকে উপত্যকার পুলিশ সূত্রে খবর, পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা, অস্ত্র মজুত এবং সরবরাহে সাহায্য করার অভিযোগে অন্তত পাঁচজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনার দিন বৈসরনের আশপাশেই ছিল তাঁরা। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, তাঁদের মোবাইলে পহেলগাঁও হামলার দিনকয়েক আগের কিছু গ্রুপ চ্যাটও মিলেছে। যেখানে জঙ্গিদের সাহায্য করার প্রসঙ্গে আলোচনা করেছিল তারা।
পাশাপাশি, সেদোরি নালা মুস্তাকাবাদ মছিলের জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিদের বাঙ্কারের হদিস পেয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। সেখান থেকে পাঁচটি একে-৪৭ রাইফেল, আটটি একে-৪৭ ম্যাগাজিন, একটি পিস্তল, একটি পিস্তল ম্যাগাজিন, একে-৪৭-এর ৬৬০টি কার্তুজ এবং এম৪ কারবাইনের ৫০টি কার্তুজ উদ্ধার করেছেন তাঁরা। যদিও, এতকিছুর পরও পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ বলছেন, ‘কোনও তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করা হচ্ছে। হামলাকারীরা যে আমাদের নাগরিক, সেই ব্যাপারে সদর্থক প্রমাণ থাকতে হবে। কিন্তু, সেটা না করে নয়াদিল্লি ফাঁকা বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতি জটিল করছে।’
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন