Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

পহেলগাঁও হামলার জের : ‌সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিতে বড় সমস্যায় পাকিস্তান

 ‌

Pahalgaon-attack

সমকালীন প্রতিবেদন : পাকিস্তানকে শুকিয়ে মারার প্ল্যান! পহেলগাঁও হামলার কড়া জবাব দিতে রেডি ভারত। একে একে ধাপ এগোচ্ছে। কাশ্মীরজুড়ে হামলাকারীদের খোঁজের মাঝেই বাতিল ভিসা।‌ বন্ধ আটারি। পাকিস্তানের সঙ্গে থাকবে না কূটনৈতিক, দ্বিপাক্ষিক এবং জনসম্পর্কও। তাহলে চিকিৎসা করাতে, কিংবা পড়তে আসা পাকিস্তানিদেরও কি এবার ভারত ছাড়তে হবে? এতো বড় জঙ্গি হামলার পর কেমন আছে ভূস্বর্গ? বাতিল একের পর এক পর্যটকদের বুকিং।

পহেলগাঁওয়ে নৃশংস হামলার জেরে পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে ভারত-পাক সম্পর্ক, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বুঝতে হবে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে একাধিক চুক্তি রয়েছে। কিন্তু পহেলগাঁও হামলার জেরে অলরেডি সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। আর ভারতের এই সিদ্ধান্তে পাকিস্তান যে কত বড় সমস্যায় পড়তে পারে সেটা একবার জানিয়ে দিই।

৯ বছরের আলোচনার পরে ১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সিন্ধু জলচুক্তি সই করে ভারত ও পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ৮০ শতাংশ, ভারতের ২০ শতাংশ। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত ওই জল ব্যবহার করলেও তা আটকাতে পারবে না পাকিস্তান। সেই চুক্তি থেকে ভারত যদি সরে আসে, তাহলে গোটা পাকিস্তানের জল সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। 

বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল হয়ে গেলে অকূল পাথারে পড়বে পাকিস্তান। সেদেশের ৮০ শতাংশ কৃষিজমিতে জল সরবরাহ হয় এই চুক্তির মাধ্যমে। সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জলের ৯০ শতাংশেরও বেশি আসে সিন্ধু নদ থেকে। করাচি, মুলতান, লাহোরের মতো বড় শহরগুলিতেও সিন্ধু নদের জলই ব্যবহৃত হয়। তারবেলা এবং মাংলার জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চলে সিন্ধুর জল থেকেই। গম, চাল, আখ, তুলো চাষ এবং পাকিস্তানের জিডিপির ২৫ শতাংশ নির্ভর করে এই সিন্ধুর জলের উপরেই। 

তাই এই চুক্তি মোতাবেক জল না পেলে পাকিস্তানের কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, জনজীবন-সবই থমকে যাবে। যেহেতু পাকিস্তানে প্রবল জল সংকট, তাই সিন্ধু নদের জল না পেলে কার্যত শুকিয়ে যাবে দেশের বিরাট অংশ। তবে না, শুধু এটুকুতেই থেমে থাকেনি ভারত। পাকিস্তানি নাগরিকরা ভিসা পাবেন না ভারতের। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আটারি-ওয়াঘা সীমান্তও। পঞ্জাব সীমান্তে দুদেশের মধ্যে পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ। বুধবারই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ভারতে রয়েছেন যে পাকিস্তানিরা, অবিলম্বে বেরিয়ে যেতে হবে তাঁদের। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে পাকিস্তানি নাগরিকদের। 

শুধু তাই নয়, কোন‌ও পাকিস্তানি নাগরিক আর ভারতে আসতেও পারবেন না। এমনকি সার্ক ভিসা নিয়েও আর ভারতে আসা যাবে না। জানিয়ে রাখি, এই ভিসা স্কিমের মাধ্যমে অনেক পাকিস্তানি শিল্পী এবং ব্যক্তিত্ব প্রতি বছর ভারতে আসতেন। তাছাড়া, যে সমস্ত পাকিস্তানি নাগরিককে SPES ভিসা দিয়েছিল ভারত, সেটাও বাতিল বলে গণ্য হবে। যারা এই ভিসা নিয়ে ভারতে রয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে তাদের। যাদের কাছে স্টুডেন্ট, মেডিক্যাল, বা বিজনেস ভিসা আছে, বর্তমানে মনে করা হচ্ছে যে, তাদেরও ভারত ছাড়তে হবে। এরা আটারি-ওয়াঘা বর্ডার থেকে এসেছিলেন এবং এই রুটেই তাদের ফিরে যেতে হবে। সূত্রের খবর, সরকারের মনোভাব অত্যন্ত কঠোর। তাই মানবিক ভিত্তিতে ছাড় পাওয়া কঠিন মনে হচ্ছে।

আসলে, টেরোরিজম এর বিরুদ্ধে ভারতের জিরো টলারেন্স পলিসির কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যা যা স্টেপ নিচ্ছে, তার মধ্যে আরও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হল দিল্লিতে পাকিস্তানি দূতাবাসে প্রতিরক্ষা, নৌবাহিনী, এবং বায়ু উপদেষ্টাদের ‘Persona Non Grata’ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। পাশাপাশি, ইসলামাবাদে থাকা প্রতিরক্ষা, নৌবাহিনী, এবং বায়ু উপদেষ্টাদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। উভয় দেশের দূতাবাসে এই পদগুলো এখন বাতিল করা হয়েছে। উভয় দেশের কূটনৈতিক কর্মচারীর সংখ্যা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ করা হবে। 

আরো আছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্য স্থগিত করেছে ভারত। সমস্ত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও বন্ধ করা হয়েছে। মোদ্দা কথা, শুধু হাতে নয়, পাকিস্তানকে এবার ভাতে মারারও প্ল্যান করছে নয়াদিল্লি। অন্যদিকে যে ভূস্বর্গ রক্তাক্ত হয়েছে, এতগুলো নিরীহ প্রাণের বলি হয়েছে, সেখানে এখন যেতে মানুষ ভয় পাচ্ছে। পৃথিবীর জন্নত বা ভূস্বর্গ যে কাশ্মীর, আপাতত সেখান থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন পর্যটকরা। বাতিল হচ্ছে একের পর এক বুকিং। কাশ্মীর পর্যটনে বড় ধাক্কা। ট্যুর অপারেটরদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন