সমকালীন প্রতিবেদন : আরজিকর আন্দোলনের পথেই চাকরিহারারা? বিধানসভা ভোটের আগে প্রবল অস্বস্তিতে শাসক দল তৃণমূল। ডেডলাইন বেঁধে নবান্ন অভিযানের ডাক। আর ফায়দা কাদের? আরজি কর কাণ্ডের মতোই চাকরিহারাদের ব্যবহার করে নিজেদের আখের বোঝাতে চাইছে না তো বাম, বিজেপি? আরজি কর প্রথম, এবার চাকরিহারা এফেক্ট তৃণমূলের ভোট বাক্সে কতটা প্রভাব ফেলবে? কি মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা? বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদনে।
তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের "অসময়" যেন কিছুতেই কাটছে না। বাংলায় আরজি কর কাণ্ডে তৃণমূল কংগ্রেস যে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছিল, সেটা অস্বীকার করার কোনো জায়গা নেই। সেটার রেশ কাটতে পারল না। এবার চাকরিহারা ইস্যুতে ফের কোন ঠাসা বাংলার বুকে শাসকদল। আরজি কর কাণ্ডে নির্যাতিতাকে ন্যায় বিচার পাইয়ে দিতে প্রতিবাদ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে বিরোধী শিবির।
কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মিটিং মিছিল, সভা সমাবেশ, নবান্ন অভিযানে রাজনৈতিক স্বার্থ যে জড়িয়ে ছিল, তা একসময় বুঝতে বাকি ছিল না কারোরই। আর এবার চাকরিহারা ইস্যুকে সামনে রেখে যেভাবে নিজেদের জমি তৈরি করতে চাইছে বাম এবং বিজেপি, সেখানেও যে কতখানি রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িয়ে রয়েছে, তা নিয়ে চারিদিকে অলরেডি কানাঘুষো শুরু হয়ে গেছে।
এখন প্রশ্ন হল, এইসবের মাঝে তৃণমূলের কারেন্ট স্ট্যাটাসটা কি? বলা ভালো বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল এই চাকরিহারা ইস্যুতে কত বড় ধাক্কা খেলো? সেক্ষেত্রে প্রথমেই জানিয়ে রাখতে হয়, চাকরি বাতিলকাণ্ডে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে একাংশ। ২১ এপ্রিল নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী, চাকরিজীবী ও চাকরিহারা ঐক্যমঞ্চ। বঞ্চনা ও দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং স্বচ্ছভাবে সরকারি সকল শূন্যপদ পূরণ ও বঞ্চিতদের সুনিশ্চিত চাকরির দাবি নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে।
এই মঞ্চের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে যা যা বলা হয়েছে তার মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য কথা, "এখন রাজনীতি করার সময় নয়। আপনারা সবাই মিলে আসুন হাতে হাত ধরে ...যে প্রশাসনিক জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী বসে...এই ধরনের অন্যায়-অবিচার করে যাচ্ছেন, এখনই সেটা বন্ধ করতে হবে।" এটা শুধু চাকরিহারাদের কথা নয়, এই একই কথা সাধারণ মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংক্রান্ত পোস্টে ছয়লাপ। মানুষ রাজ্য সরকারকে দুষছে। আর প্যানেল বাতিলের পর থেকে এই যা যা ঘটছে তা থেকেই পরিষ্কার আরজি কর কাণ্ডের পর, চাকরিহারা ইস্যুতেও রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করে কার্যত ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা বাংলা।
আর এসব দেখে শুনেই রাজনীতির কারবারিদের একাংশ বলছেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই চাকরি বাতিল কান্ড তৃণমূলের অস্বস্তি দ্বিগুণ করল। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারলে, যার প্রভাব ২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনেও পড়ার আশঙ্কা থাকছে। কারণ যে ভোট বাক্স বাঁচাতে তৃণমূল এবার বিজেপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রামনবমী পালনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, সেই ভোট বাক্সের জন্যই নিজেদের জমি শক্ত করতে চাকরিহারা ইস্যুকে বিরোধী শিবির যথোপযুক্ত পদ্ধতিতে কাজে লাগাচ্ছে। এমন মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
অনেকেই অবশ্য বলছেন, আরজি কর আন্দোলনে প্রতিবাদ মিছিল ও জমায়েতে সামনের সারিতে ছিল বামেরা। এমনকি বিজেপিও তৃণমূলকে শাসনভার থেকে সরানোর কম চেষ্টা করেনি। ফলে এই ধারণা কিছুটা হলেও ছড়িয়ে গিয়েছিল যে, রাজ্য রাজনীতিতে বামেদের অন্তত দ্বিতীয় শক্তি হিসেব উঠে আসার লঞ্চিং প্যাড আরজি কর আন্দোলন জুগিয়ে দিয়েছে। আবার কখনো এমনও মনে হয়েছে যে, বিজেপিও বাংলার বুকে সেই শক্তি সঞ্চয় করতে পেরেছে, যা তৃণমূলকে ছাপিয়ে যেতে পারে।
কিন্তু রাজ্যের উপনির্বাচনের ফল বেরোতেই দেখা গেছে, তৃণমূল রয়েছে তৃণমূলেই। ফলে এখনই এই নিয়ে কোন ধারণা বেঁধে রাখা কঠিন যে, বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোট বাক্সে এই চাকরিহারা ইস্যু ঠিক কতটা এফেক্ট ফেলবে। কারণ সময় এখনো অনেক বাকি। আর দেখার বাকি যে, এই চাকরিহারা ইস্যুতে আন্দোলন প্রতিবাদ এর জল কোন দিকে আর কত দূর গড়ায় এবং সেই চ্যালেঞ্জকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কিভাবে ফেস করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন