Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫

২৬ এর বিধানসভাকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই বামেদের

 ‌‌

Leftist-Brigade-Rally

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌'এই রাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপির স্ক্রিপ্ট লিখে দিচ্ছেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। লাল ঝান্ডা কোন কাপড়ের টুকরো নয়, লাল ঝান্ডা কোন চিটফান্ডের টাকায় কেনা হয়নি। তাই এটার বিলুপ্তি ঘটানো সম্ভব নয়। এখানে লড়াইয়ের শেষ নয়, আজ থেকে লড়াই শুরু। মমতায় দয়ায় আজ আরএসএস এই রাজ্যে ঘর বেঁধেছে। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন বলেই বিগত কয়েকবছর ধরে রাজ্যে একের পর এক দাঙ্গা হয়েছে। লাল হটেছে কিন্তু দেশ বাঁচেনি, দেশ বাঁচাতে আবার লাল ঝান্ডাকে আবার ওড়াতে হবে। আজকের লড়াই নতুন দিশার লড়াই। '‌ রবিবার ব্রিগেড ময়দানে এভাবেই গর্জে উঠলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।

এদিন দুপুরে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হল সিপিএমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর এই প্রথম ব্রিগেডে বড়সড় জমায়েত করল বামফ্রন্ট। কৃষকসভা, সিটু এবং ক্ষেতমজুর সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এই সভার মূল উদ্দেশ্য—কৃষক, শ্রমিক ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির দাবিদাওয়া তুলে ধরা এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে বামেদের শক্তি প্রদর্শন। এদিনের সমাবেশ থেকেই ২০ মে দেশ জুড়ে সাধারণ ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানানো হয়।

তীব্র গরমের মধ্যেই এদিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে বাম নেতা, কর্মী, সমর্থকেরা এই সমাবেশে অংশ নেন। বৈশাখের দুপুরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে একটা প্রচ্ছন্ন চিন্তা ছিলই শীর্ষ নেতৃত্বের। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, 'আমাদের প্রতি প্রকৃতিও সহায়। তপ্ত রোদ ওঠেনি। উঠলেও এই ভিড় বুঝিয়ে দিচ্ছে লাল ঝান্ডার প্রতি জনতার আবেগ। যাঁরা দূরবীন দিয়ে লাল ঝান্ডা দেখতে পাচ্ছিল না, আজকের এই ব্রিগেড তাদের বুকে কাঁপন ধরাবে। কাজের জায়গার বৃত্ত ছোট হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্র, রাজ্যে কোথাও নতুন করে নিয়োগ হচ্ছে না। যেখানেই নিয়োগ হচ্ছে, সেখানেই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি। ২৬ হাজার মানুষের চাকরি গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাকে ঝামা ঘষে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।'‌

এদিনের সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন সিটুর রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু। তিনি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, 'কেন্দ্রের নীতিতে গরীবের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। দেশের সম্পদ আজ আদানি-আম্বানিদের হাতে। পুজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা করছে মোদী সরকার। সাধারণ মানুষের শিক্ষা-স্বাস্থ্যের অধিকার কাড়ছে কেন্দ্র। দেশ বিভাজনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চলছে। গোটা দেশে আজ চলছে বিভাজনের রাজনীতি। দেশে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বাড়ছে। আক্রান্ত দেশের সংবিধান। রাজ্যের যুবকেরা কাজের সন্ধানে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে বাইরের রাজ্যে চলে যাচ্ছে। কেন্দ্রের নীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়েছে। বেকারত্ব আকাশছোঁয়া। স্থায়ী শ্রমিকের বদলে অস্থায়ী শ্রমিক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।'‌

বিধানসভা নির্বাচনের বছরখানেক আগে ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে এদিন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক তথা সমাবেশের হেভিওয়েট বক্তা মহম্মদ সেলিম দাবি করলেন, 'খেটে খাওয়া মানুষকে এখন খুঁটে খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এখন রাজ্য এবং দেশে দুর্দশা চলছে। আর সেই দুর্দশা কাটাতে পারে বামেরাই। যখন সংকট হয়, যখন সমস্যা হয়, যখন বিপদ আসে, এমনকী যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান, যদি অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার ভয় থাকে, তাহলে বলা হয়, একটু বাঁ-দিকে চেপে যান, বাঁ-দিক ধরুন। আজ এই দেশ এবং রাজ্যকে বাঁচাতে হলে বামপথ ধরতে হবে।'‌

সেলিম এদিন বলেন, 'বামপন্থা একটা আদর্শ। এটা একটা লক্ষ্য। বিজেপি আর তৃণমূল এই বাংলাকে একটা লক্ষ্যহীন জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছে। যেখানে আমাদের ইতিহাস, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের শিক্ষা, আমাদের ঐক্য-সম্প্রীতি-ভালোবাসার সম্পর্ক, আমাদের শান্তিকে ওরা ছিঁড়ে খুবলে খেতে চাইছে। আজকের লড়াইটা হচ্ছে মানুষের দুর্দশা পাল্টানোর জন্য। আমাদের দেশের এবং রাজ্যের দুর্দশা পাল্টানোর জন্য। দিশা পাল্টাতে হবে। আর সেই দিশা পাল্টানোর জন্য আমরা এখানে জড়ো হয়েছি।'‌

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এদিন আরও বলেন, 'মেহনতি মানুষের আজকের এই সমাবেশে ওঁদের বুকে কাঁপুনি ধরিয়েছে। মোদী-মমতার সরকার কাজের জায়গাটা ছোট করে দিচ্ছে। কোন নিয়োগ নেই, কলকারখানা নেই, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাকে ঝামা ঘষে দিয়েছে। তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে গেছে। রাজ্য পাল্টাচ্ছে। মানুষ অধিকার বুঝে নেওয়ার জন্য জেগে উঠছে। দিন পাল্টাচ্ছে তার আগাম আভাস এসেছে। সর্বহারার শক্তির মোকাবিলা করার ক্ষমতা মমতার নেই। মুর্শিদাবাদ, মালদায় যা ঘটেছে তা গোটাটাই পরিকল্পনামাফিক করা হয়েছে। হিংসা দেখলে ডান্ডাগুলোকে মোটা করতে হবে। দেশ বাঁচাতে হলে আবার লাল ঝান্ডাকে মজবুত করতে হবে।'





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন