সমকালীন প্রতিবেদন : ঘিবলি জ্বরে কাবু এ টু জেড। এই ঘিবলি আসলে কি? ডিজিটাল দুনিয়ার নতুন ক্রেজ, নাকি সর্বস্ব খোয়ানোর নতুন ফাঁদ? ভেবে দেখেছেন, আপনার ছবি অজান্তেই চুরি করছে না তো ঘিবলি? কোটি কোটি ডলারে বিক্রি করবে সংস্থা? কোথা থেকে এলো ঘিবলি ট্রেন্ড? নিজের ছবি ঘিবলি করার আগে অবশ্যই পড়ুন এই প্রতিবেদনটি।
সম্প্রতি সমাজমাধ্যম জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ঘিবলি স্টাইলের অনেক ছবি। ওপেন এআই এর চ্যাটজিপিটি ৪.০ তেই পাওয়া যাচ্ছে এই সুবিধে। বিনামূল্যে এই ধরনের ছবি দেদারসে তৈরি করে নিচ্ছে মানুষ নিজেই। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম কিংবা এক্স– সব জায়গায় এই ধরনের ছবি শেয়ার করছেন নেটিজেনরা। কিন্তু এই গোটা বিষয়টার আড়ালে যে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে, এআই সংস্থাগুলো আপনার ছবি চুরি করে নিচ্ছে না তো? এই ফেস রেকগনিশন অন্য কোনও সংস্থার কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে না তো আপনার অজান্তেই?
ঘিবলি স্টাইলে ছবি বানাতে গিয়ে শুধু যে আমরা এআই সংস্থাগুলোর কাছে ফেস রেকগনিশন দিয়ে দিচ্ছি তাই নয়, প্রতিদিনই আমরা নিজেদের ছবি এই ধরনের এআই সংস্থাগুলিকে দিয়ে দিচ্ছি। ফোন আনলক করার জন্য, সমাজমাধ্যমে ট্যাগ করার জন্য আমাদের ফেস রেকগনিশন দরকার হয়। আর এই সংবেদনশীল তথ্য যদি চুরি হয়ে যায়, আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। অনেকেই এই বিষয়টাকে আমল দেন না।
এর আগে ক্রিয়ারভিউ এআই-কে ঘিরে সমস্যা দেখা গিয়েছিল। বড়সড় অভিযোগ উঠেছিল যে, এই সংস্থা সমাজমাধ্যম, খবরের চ্যানেল, পাবলিক রেকর্ড থেকে ৩ বিলিয়ন ছবির ডেটাবেস সংগ্রহ করেছিল কারও অনুমতি না নিয়েই। আর সেগুলিকেই পুলিশ ও বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বিক্রি করে দিচ্ছিল। এবার প্রশ্ন হল, আপনার ছবি চুরি করে বিক্রি করে, অর্থ উপার্জন করছে না তো তারা?
স্ট্যাটিস্টার রিপোর্ট অনুসারে, ফেসিয়াল রেকগনিশন টেকনোলজির বাজারমূল্য ২০২৫ সালে যাবে ৫.৭৩ বিলিয়ন ডলারে। আর ২০৩১ সালের মধ্যে ১৪.৫৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাবে। ১৬.৭৯ শতাংশ CAGR আসতে পারে এই বাজারে। গুগল এবং মেটার এআই মডেলগুলোকে গ্রাহকের ছবি দেখিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে, কিন্তু সেগুলো তারা কোথাও বিক্রি করে না।
এবার যেটা জানাবো এই ঘিবলি, যা নিয়ে এত মাতামাতি চারিদিকে সেটা আসলে কি? একটা অ্যানিমেশন স্টুডিয়োর নাম। এই স্টুডিয়োর জন্ম ১৯৮৫ সালে, জাপানে। বেসিক্যালি উজ্জ্বল জলরঙ দিয়ে আঁকা কিংবা আক্রেলিক রঙ দিয়ে হাতে আঁকা হতো স্টুডিয়োর সমস্ত অ্যানিমেশন। ক্রমেই এই অ্যানিমেশনের জনপ্রিয়তা জাপানের গণ্ডি ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় আন্তর্জাতিক লেভেলে। ওয়াল্ট ডিজনি প্রস্তাব দেয় পার্টনারশিপের। ফলে ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে ঘিবলির কার্টুন।
ঘিবলি কিন্তু সাংঘাতিক জনপ্রিয়। গত ৩৮ বছরে হাতেগোানা ২২টি ছবি তৈরি করেছে ঘিবলি স্টুডিয়ো। টেলিভিশনের জন্য তাঁরা বানিয়েছিল ৩টে ছবি। আর সেই ছবির প্রত্যেকটা অ্যানিমেশন দুনিয়ায় রীতিমতো ঝড় তুলেছে। বড় বড় সব পুরস্কার জিতেছে।
সম্প্রতি ওপেন এআই এর চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারীরা দেখতে পান, তাঁরা নিজেদের ছবি ঘিবলি অ্যানিমেশনে বদলে নিতে পারছেন। এরপরেই ঘিবলি আর্টের ডিমান্ড তুঙ্গে ওঠে। যে ডিমান্ডে সামিল ভিভিআইপি থেকে শুরু করে সর্বসাধারণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বাদ যাননি। খেলোয়াড় থেকে শুরু করে বলিউড সেলিব্রিটি, সক্কলেই আপাতত ঘিবলি জ্বরে ভুগছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন