সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলা নববর্ষ, অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ, বাঙালি সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল পরিচায়ক। এক সময় এটি ছিল মূলত কৃষিনির্ভর সমাজে খাজনা আদায়ের দিন। মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেন কৃষিকাজ ও করব্যবস্থা সহজ করার জন্য। সেই সময় নববর্ষ মানেই ছিল হালখাতা, নতুন খাতা-পত্রে ব্যবসা শুরু, আর গৃহস্থালির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা।
সেকালের বাংলা নববর্ষ ছিল মূলত অর্থনৈতিক ও সামাজিক কার্যকলাপের একটি অংশ। তখন উৎসবের চেয়ে প্রথার দিকটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গ্রামবাংলায় হালখাতা, প্যান্ডেল করে দোকানদাররা মিষ্টিমুখ করাতেন, মানুষ নতুন জামা-কাপড় পরতেন।
কালের পরিবর্তনে নববর্ষ এখন এক বৃহৎ সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। শহরাঞ্চলে পয়লা বৈশাখ মানে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা, রবীন্দ্রসংগীত, বৈশাখী মেলা, আর ঐতিহ্যবাহী খাবার। মানুষ এখন এই দিনে নিজের শিকড়কে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে চায়।
বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে শুধু একটি ক্যালেন্ডার বর্ষের সূচনাই নয়, বরং এটি আমাদের পরিচয়, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এই দিনে সকল ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণির মানুষ একত্রিত হয়ে মিলনের বার্তা বহন করে।
সেকালের প্রথাভিত্তিক উদযাপন একালের উদার ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে পূর্ণ উৎসবে রূপান্তরিত হয়েছে। টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্ষবরণের নানা অনুষ্ঠান সম্প্রচার হয়।
কিন্তু মূল চেতনা—আপন শিকড়কে স্মরণ করা ও নতুন বছরকে শুভ কামনায় গ্রহণ করা—আজও অবিচল। সুতরাং, সেকাল আর একালের প্রেক্ষাপট বদলালেও বাংলা নববর্ষের আবেগ আজও সমান শক্তিশালী।
আজকের বৈশ্বিকীকরণ আর ডিজিটাল দুনিয়ায়ও বাংলা নববর্ষ আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমাদের জাতিসত্তা, ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে। সুতরাং, বাংলা নববর্ষ শুধু একটি উৎসব নয়, এটি বাঙালির জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন