সমকালীন প্রতিবেদন : পারকিনসন্স কতটা সাঙ্ঘাতিক অসুখ, তা অনেক মানুষেরই জানা। আজ বলবো এই রোগীদের কি খাওয়া উচিত? কি করলে এই রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? কি ধরনের ব্যায়াম করতে হবে? আর সঙ্গে থাকবে পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ, যাতে এই রোগে আক্রান্ত হলে খুব দ্রুত আপনারা সতর্ক হয়ে যেতে পারেন।
বয়স বাড়লে যে রোগগুলো শরীরে থাবা বসায়, ডিমেনশিয়া এবং পারকিনসন্স তার মধ্যে অন্যতম। তবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, কমবয়সিদের মধ্যেও এখন পারকিনসন্স থাবা বসাচ্ছে। প্রথমেই জানিয়ে রাখি, এটা এক ধরনের স্নায়ুর অসুখ। সিম্পটম বা লক্ষণগুলোতে পরে আসছি। আগে জানিয়ে রাখি গবেষণা কি বলছে? যারা এই রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য এটা সুখবর বলা যায়। কারণ বলা হচ্ছে, নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাসে এই রোগের ঝুঁকি কমে অনেকাংশে।
এখন প্রশ্ন হল, কি ধরনের শরীরচর্চা করা উচিত? বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শরীরচর্চার গুণে যারা এই রোগ এড়িয়েছেন তারা জানিয়েছেন, তাঁরা নিয়মিত হাঁটাচলা করতেন, সিঁড়ি ভাঙতেন, ঘরের সমস্ত কাজ নিজের হাতেই করেন। এছাড়াও খেলাধুলোও করতেন। অর্থাৎ বেশির ভাগ সময়ই শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকতেন।
কিন্তু চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, শরীরচর্চা করলেই পারকিনসন্স রোগ কমে যাবে, তা কিন্তু একেবারেই নয়। ব্যায়াম, যোগাসন পারকিনসন্সের ওষুধ নয়। শরীরচর্চা করলে পারকিনসন্সের ঝুঁকি কমে। শরীরচর্চার সঙ্গে পারকিনসন্সের সম্পর্ক এখানেই। এই রোগের লক্ষণ এতটাই সূক্ষ্ম যে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে না। বেশ কয়েক সপ্তাহ অথবা মাস কেটে যাওয়ার পর এই রোগটি ধরা পড়ে। ততদিনে লক্ষণের তীব্রতাও বৃদ্ধি পায়।
প্রাথমিকভাবে ওষুধের মাধ্যমে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সাধারণত এই স্নায়ুর রোগ থেকে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে হাত-পায়ে অনিচ্ছাকৃত কম্পন দেখা দেওয়া, হাঁটাচলা শ্লথ হয়ে যাওয়া, পেশি ক্রমশ শক্ত হয়ে আসা, কথা বলার সময় কথা জড়িয়ে যাওয়া, এগুলো পারকিনসন্সের প্রাথমিক কয়েকটি উপসর্গ। এছাড়াও পায়ের কয়েকটি উপসর্গও বলে দেবে, আপনি পারকিনসন্সের শিকার কি না। পায়ের পেশিতে হঠাৎ টান ধরা, পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, গোড়ালি ফুলে যাওয়ার মতো কিছু উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
এগুলো ছাড়াও চিকিৎসকরা পারকিনসন্সের অন্য নতুন কয়েকটা উপসর্গের উল্লেখ করেছেন। তবে মাথায় রাখবেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জটিল হয়ে ওঠে এই অসুখ। তাই দ্রুত চিকিৎসা শুরু হওয়া দরকার। চিকিৎসা না করালে রোগের তীব্রতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি মৃত্যু হয়। তাই খুব তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানিয়ে রাখা উচিত। চিকিৎসকরা বলছেন, সব ক্ষেত্রে কম্পন নাও হতে পারে। এটি একটা মাল্টিসিস্টেম ডিসঅর্ডার যার উপসর্গ হল হাইপোসমিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বিষণ্নতা।
একদম ব্যালেন্সড ডায়েট, হেলদি লাইফস্টাইল এক্ষেত্রে অনেকটা কার্যকরী হতে পারে। খাবারের কথা এলে চিকিৎসকদের মতে, পারকিনসন্স রোগ প্রতিরোধ করার জন্য বিশেষ খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত। তাহলে সুস্থ থাকা সম্ভব। এছাড়া কিছু খাবার এড়িয়ে চলাও উচিত। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত এই রোগীদের। তাহলে পারকিনসন্স রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাছাড়া পারকিনসন্স রোগীদের কোনও কিছু চিবোতে বা গিলে খেতে সমস্যা হয়। তাই মাংসের মতো এমন কিছু খাবার খাওয়া উচিত নয়, যাতে খাওয়ার সময় সমস্যা হয়।
পারকিনসন্স রোগ প্রতিরোধ করতে হলে চিনি, নুন, সোডিয়াম কম খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এর বদলে তাঁরা বেশি সবজি, ফল, দানাশস্য খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস বেশি পরিমাণে রয়েছে, এমন খাবার নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। রঙিন ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস থাকে। তাই এগুলো খাওয়া যেতে পারে। চিকিৎসকদের মতে আরো কিছু জিনিস এড়িয়ে চলতে হবে, যেমন প্রসেসড ও বেশি পরিমাণে কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার দাবার। চিজ, ইয়োগার্ট, লো-ফ্যাট দুধও না খাওয়াই ভালো।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন