সমকালীন প্রতিবেদন : স্পিকারে ‘পেমেন্ট সাকসেসফুল’ বাজছে? বিশ্বাস করলেই ঠকবেন। সাইবার জালিয়াতদের টাকা হাতানোর নতুন ফাঁদ। ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে সচেতন হোন। পশ্চিমবঙ্গে এই চক্র সবে জল বিছিয়েছে। তার মধ্যেই নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং কলকাতা থেকে বেশ কিছু অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। ধরপাকড়ও চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কিভাবে হচ্ছে এই ধরনের জালিয়াতি? আপনি কিভাবে সাবধানতা অবলম্বন করবেন? ডিটেইল থাকছে আজকের এই প্রতিবেদনে।
শপিং মল থেকে ফুটপাতের ফুচকাওয়ালা, সব্জির ঠেলা থেকে অটো, টোটো। সব জায়গাতেই ডিজিটাল লেনদেন। ইউপিআই এর রমরমা যাকে বলে। সাধারণত কি হয়, দোকানে গিয়ে আপনি জিনিস কিনলেন। তারপর ইউপিআই এর মাধ্যমে পেমেন্ট করলেন। আর দোকানদারের আইডি-তে সেই টাকা পৌঁছতেই স্পিকারে বেজে উঠলো ‘পেমেন্ট সাকসেসফুল’। এই গোটা প্রসেসটাই আমাদের কাছে পরিচিত।
কিন্তু এখন কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে ঠিক এর উল্টোটা। ওই যে স্পিকারে বেজে উঠলো 'পেমেন্ট সাকসেসফুল' অনেকে তখন মোবাইল খুলেই দেখেন না লেনদেনের তথ্য। মানে আদৌ টাকাটা নিজের অ্যাকাউন্টে এলো কিনা। আর ঠিক এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে সাইবার জালিয়াতরা। নকল পেমেন্ট অ্যালার্টের মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
অলরেডি সারা রাজ্যে এইরকম বেশ কয়েকটি অভিযোগ রেজিস্ট্রার্ড হয়েছে। কলকাতা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদেও ছড়িয়ে পড়েছে প্রতারণার জাল। তদন্তে নেমে পুলিশের সাইবার শাখা যা জানতে পারছে সেটা সাঙ্ঘাতিক। পুলিশ সূত্রে খবর, বহুল ব্যবহৃত একটা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে গোপনে চলছে ‘ইউপিআই পেমেন্ট চ্যানেল।’ যা দেখতে একদম ফোনপে, গুগল পে কিংবা পেটিএমের মতো।
আর এখানেই ঘটছে গন্ডগোল। গ্রাহককে সেই চ্যানেলের মাধ্যমে কিউআর কোড স্ক্যান করতে বলা হচ্ছে। টাকা পাঠানোর পরে প্রেরকের মোবাইলে ভেসে ওঠে ‘সাকসেসফুল’ নোটিফিকেশন। স্পিকারেও বাজছে টাকা ঢোকার আওয়াজ। কিন্তু আসলে টাকা পৌঁছোচ্ছেই না ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্টে। দিন শেষে হিসাব মেলাতেই ধরা পড়ছে গোলমাল। পুরো বিষয়টা পুলিশকে জানালে গোটা ঘটনার নেপথ্যে কে বা কারা আছে তদন্ত করে তা জানতে পারে পুলিশ।
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের সাইবার জালিয়াতারা রয়েছে বলেই প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। তবে এই রাজ্যের মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা ‘সলমন’ নামে এক প্রতারকের খোঁজও অলরেডি তদন্তকারীদের হাতে। মনে করা হচ্ছে, মুর্শিদাবাদে এই চক্রের মূলচক্রী তিনিই। যদিও সলমনের আসল নাম কি না, তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। পুরো বিষয়টা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তবে শুধুমাত্র বাংলা নয়। দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থানেও এই ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে অলরেডি একাধিক প্রতারককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে, জালিয়াতরা তৈরি করেছে ইউপিআই অ্যাপের ক্লোন সফ্টঅয়্যার।
আর তাতেই আসল নকল বোঝায় মুশকিল হচ্ছে মানুষের কাছে। ফলে, মোবাইলে অচেনা এবং অপরিচিত লিঙ্ক বা চ্যানেলে ক্লিক করতে বারণ করছে পুলিশ। তারপরেও অসুবিধায় পড়লে সরকারি হেল্পলাইন ১৯৩০ এ অভিযোগ জানাতে ভুলবেন না। অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে সাইবার অপরাধদমন শাখা, দেওয়া হয়েছে এমন আশ্বাসও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন