সমকালীন প্রতিবেদন : সূর্য ডুবলেই শোনা যায় কান্নার শব্দ! ১৭, হরচন্দ্র মল্লিক লেন, আহিরীটোলা। কলকাতার পুতুল বাড়ি! ভৌতিক রহস্যের মায়াজালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়ানো বিচিত্র সব পুতুল! চার দেওয়ালের ভেতরে রাতের অন্ধকারে এই পোড়োবাড়িতে কি ঘটে জানেন? আলো আঁধারি অলিগলির মধ্যে এক অন্য কলকাতা! সত্যিই কি ভূতের বাস এখানে? চলুন আজ হাতড়ে দেখা যাক সাবেকি কলকাতার ভূতুড়ে ইতিহাস। পুতুল বাড়ির আসল ফ্যাক্ট!
অশরীরীদের জন্য এ বাড়ির বেশ নাম ডাক। পুতুল বাড়িতে নাকি ভূত আছে! কোথায় ভূত? কিভাবে টের পাওয়া যায়? বাড়ির একতলায় গেঞ্জির কারখানায় হাতে গোনা কয়েকজন কাজ করেন। আর বাড়ির বারান্দায়, উপরের তলা মানে দোতলার বন্ধ কুঠুরিতে নাকি আত্মাদের দেদার আনাগোনা। একথাও ফিরছে মুখে মুখে। কেউ কখনও নিজের চোখে ভূত দেখার দাবি না করলেও উত্তর কলকাতার এই বাড়ি নিয়ে মুখে মুখে ঘোরে নানান গল্প।
গুজব রয়েছে, এই বাড়িতে নাকি আগেকার দিনে বাবুরা আসর বসাতেন ওই দোতলায়, হতো বাইজিদের নাচ। মহিলাদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। বিভিন্ন সময় তাঁদেরকে ওই বাড়িতেই খুনও করা হয়। যদিও জানা যায়নি সেই বাবুদের লালসাতৃপ্তির শিকার হয়েছেন কত অগুনতি মহিলা এই বাড়িতে।
কিন্তু বলা হয়, যাদেরকে খুন করা হয়েছে, তাদের অতৃপ্ত আত্মা ওই বাড়িতে আজও ঘুরে বেড়ায়। তাদের হাসি, চিৎকার, পায়ের নুপুরের ঝংকারের আওয়াজ ভেসে আসে সূর্য ডুবলেই; যা ওই বাড়িটিকে অভিশপ্ত করে তুলেছে। হৃদয়ের দুর্বলতা থাকলে রাত বাড়ার পর কলকাতার এই জায়গায় না যাওয়াই ভালো। যুক্তি নেই, তবুও এই ভয় আর আশঙ্কার পালে হাওয়া দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।
আসলে, বয়সের ভারে জীর্ণ রোমান শৈলীর এই বাড়ির দোতলা ও ছাদজুড়ে রয়েছে বিচিত্র সব পুতুলের মূর্তি। আধখানা মাথা, হাত-কান ভাঙা মূর্তিগুলোর অধিকাংশের অবস্থাই শোচনীয়। আগাছায় ঢাকা জরাজীর্ণ বাড়ি, সঙ্গে গল্প-সিনেমার ভূত আর পুতুলের যোগ, সবকিছু মিলিয়ে দুইয়ে দুইয়ে চার করে ফেলার টানেই এই পুতুল বাড়ি আজ ভৌতিক বাড়িতে পরিণত।
শুধু রাত নয়, অনেকে বলেন ভর দুপুরেও ভূতের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় এই বাড়িতে। কিন্তু কিভাবে তৈরি হলো এই পুতুল বাড়ি? বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যখন জলপথে পণ্য পরিবহন হতো, সেই সময় কলকাতার ঘাটে ঘাটে নৌকা চলত। তার মধ্যে জনপ্রিয় ঘাট ছিল আহিরীটোলা। আর এর পাশেই ছিল অনেক গুদামঘর-যুক্ত এই বাড়ি। এখানে নিরাপদে মালপত্র সংরক্ষণ করা হতো বলে জানা যায়।
এই পুতুলবাড়ি সম্ভবত ১৮০০ সালের প্রথম দিকে বা তারও আগে তৈরি করা হয়। এরপর প্রায় ৭০ বছর ধরে গুদাম হিসাবে ব্যবহৃত হতো। বাড়ির মাথায় একটা পুতুল দাঁড়িয়ে রয়েছে, পুতুলের তৈরী এই বাড়ির নামকরণ করা হয়েছে বলে এই বাড়ির নাম পুতুল বাড়ি। কত মানুষ কত কৌতুহল নিয়ে এই পুতুল বাড়ির দরজায় হাজির হন আজও।
আসলে, মানুষের মনে গেঁথে গেছে বিশ্বাস। পুতুল বাড়িতে কান পাতলেই নাকি শোনা যায় শতাব্দিপ্রাচীন অশরীরী আত্মাদের আর্তনাদ। অনুভব করা যায় গা ছমছমে পরিবেশ। ‘ঘোস্ট ওয়াক’ চলে তাও আবার দিনের যে কোনও সময়।
পরিস্থিতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে, মানুষের উৎপাত আটকাতে বাড়ির গেটের পাশে লাগানো হয়েছে ফ্লেক্স। তাতে লেখা, ‘কঠোরভাবে প্রবেশ নিষেধ। ভূত সংক্রান্ত তথ্যগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যে।’ তাতেও লাভ হয়নি। পুরনো কলকাতার স্মৃতি আঁকড়ে থাকা ভগ্নপ্রায় এই বাড়ি আজও সয়ে চলেছে ভূতপ্রেমীদের অত্যাচার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন