সমকালীন প্রতিবেদন : একজনের মৃত্যুদিন। বছর বছর এই দিনেই ভালোবাসায় ডুবে যায় লক্ষ কোটি প্রেমিক প্রেমিকা। কিন্তু প্রিয়জনকে কেন ভ্যালেনটাইন বলে ডাকা হয়? যে প্রেমিকের চিঠি থেকে "ভ্যালেন্টাইনস ডে" এলো, সেই মানুষটা আজ কোথায়? প্রিয়জনকে কেন ভ্যালেনটাইন বলে ডাকা হয়? চকলেট, ফুল, উপহার দেওয়া নেওয়া তো আছেই। কিন্তু প্রেম দিবসে কোন কায়দায় সঙ্গীকে করবেন চির আপন? ট্র্যাজিক প্রেমের উপাখ্যান থেকে টিপস্, সবটাই থাকল আজকের প্রতিবেদনে।
কথায় বলে "বুক ফাটে, তবু মুখ ফোটে না"! আপনিও কি আপনার মনের মানুষকে এতদিনে মনের কথাটা বলে উঠতে পারেননি? পুরনো ধাঁচে ফিরুন এবারের ভ্যালেন্টাইনস ডে'তে। কিভাবে? সেটাতে পরে আসবো। তার আগে জানা দরকার ভালোবাসাকে উৎসর্গ করার চিঠি, আর একটা মানুষের প্রাণ। কিভাবে ১৪ ই ফেব্রুয়ারি কে করে তুলল প্রেমিক প্রেমিকাদের "ভ্যালেন্টাইনস ডে"!
২৬৯ সালে ইতালির রোম নগরীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ছিলেন। সেন্ট ভ্যালেনটাইন খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার করতেন। কিন্তু তা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের নীতির বিরোধী। সেই সময় রোম, ইতালিতে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করা অপরাধ ছিল। তৎকালীন রোমের সিংহাসনে সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রেম, বিয়ে ইত্যাদি করলে একজন পুরুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁর যুদ্ধ করার শক্তি কমে যায়। তাই তাঁর সেনাবাহিনীর কেউ সম্পর্কে জড়াতে পারত না।
কিন্তু সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তিনি রোমান সৈন্যদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার জন্য বিবাহের অনুষ্ঠান করতেন। তাই, সম্রাটের যে আইনে বলা ছিল, সেনাবাহিনীতে চাকরি করা যুবকেরা বিয়ে করতে পারবে না, সেই আইনকে অমান্য করে যে সকল সৈন্যরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চান, তাঁদের জন্য গোপনে বিবাহের কাজ চালিয়ে যান তিনি। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য লোকেদের মধ্যেও ভালবাসা জাগিয়ে তুলতে প্রচার শুরু করেন।
সেই সময়ই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এর জনপ্রিয়তা মানুষের মধ্যে বাড়তে থাকে। রোমে নিষিদ্ধ খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের জন্য এবং সৈন্যদের মধ্যে বিবাহ বাসনা জাগিয়ে তোলার জন্য সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্রাটের রোষানলে পড়েন। সম্রাট তাঁকে কারাবন্দী করেন। ধর্মপ্রচার করার পাশাপাশি ভ্যালেনটাইন মানুষকে ভালবাসতেন, মানুষের সেবাও করতেন। জেলবন্দী অবস্থাতেও সেই অভ্যাস ছাড়তে পারেননি।
ওই সময় তিনি কারা প্রধানের মেয়ের প্রেমে পড়েন। এমনকি কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থও করে তোলেন। এরপর সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। এই ঘটনা কানে আসতেই ক্লডিয়াস প্রচণ্ড রেগে যান। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুদণ্ড দেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে জানানো হয়। খবরটা পাওয়া মাত্রই একটা চিঠি লেখেন সেন্ট ভ্যালেনটাইন। যে চিঠির শেষে লেখা ছিল "লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন"। হ্যাঁ, এই ‘তোমার ভ্যালেনটাইনের পক্ষ থেকে’ কথাটাই হয়ে যায় ফেমাস।
চিঠিতে লেখা এই ‘ইয়োর ভ্যালেনটাইন’ কথাটাই সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুদণ্ডের পর থেকে তাঁর প্রেমকাহিনির মতো বিখ্যাত হয়ে যায়। সেই থেকেই ধীরে ধীরে প্রেম দিবসে প্রিয় সঙ্গীকে ‘মাই ভ্যালেনটাইন’ বলে ডাকার রীতি শুরু হয়। যিনি প্রেমের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন, সেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্বীকার করে মানুষ তাঁর এই নামটিকে ভালবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে। সেখানকার মানুষেরা তাঁকে একটা দিন উৎসর্গ করার কথাও ভাবে। সেটাই ১৪ই ফেব্রুয়ারি। পরে পোপ গেলাসিয়াস প্রথম এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইনস ডে হিসেবে ঘোষণা করেন।
তারপর থেকে প্রতিটা বছর এই বিশেষ দিনকে কেন্দ্র করে শুধু কতগুলো হৃদয় একসাথে জুড়ে যাচ্ছে তাই নয়, ভ্যালেন্টাইন ডে কে সামনে রেখে বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হচ্ছে। অপ্রত্যাশিতভাবে বিভিন্ন রকম উপহার তৈরি করা হচ্ছে এই দিনটিকে সামনে রেখে। সারা পৃথিবীর প্রেমিক-প্রেমিকা এবং প্রিয়জনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে নানান উপহার সামগ্রী। চড়া দামে বিশ্বের বাজারে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো। কোটি কোটি ডলার, পাউন্ড সহ বিশ্বজুড়ে রমরমিয়ে চলছে সেই ব্যবসা।
কিন্তু ব্যবসার কথা নয়। আজ হোক মনের কথা। যে মনের কথা মনের মানুষকে জানাতে আপনারা সাহায্য নিতে পারেন প্রেমপত্রের। শপিং বিষয়টাও মানুষের বেশ পছন্দের। পছন্দের মানুষকে পছন্দসই জিনিসও উপহার দেওয়া যাবে। আবার, প্রেম প্রস্তাবও। তাই এদিন আপনার মনের মানুষের সাথে শপিং করুন। তার ভালো লাগার মতো উপহার দিন। বুঝিয়ে দিন সেই মানুষটা আপনার কাছে কতটা স্পেশাল। কাছে পিঠে কিংবা দূরে, যেতে পারেন ঘুরতেও। বিশেষ মানুষের সঙ্গে সারতে পারেন ক্যান্ডেল লাইট ডিনার। বসন্তের আমেজ গায়ে মেখে প্রেম দিবসকে করে তুলুন আরও বেশি স্পেশাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন