Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশ এবারেও কি একুশে ফেব্রুয়ারির সেই ঐতিহ্য, আবেগ, গর্বকে ধরে রাখতে পারবে?

 ‌

Tradition-of-February-21th

সমকালীন প্রতিবেদন : ভাষা দিবস ঘিরে অনিশ্চয়তার মেঘ। একুশে আসে প্রতি বার। তবে এবারের একুশে আলাদা। ভাষা-আন্দোলনের পীঠভূমি বাংলাদেশ এখন ক্ষত-বিক্ষত। মৌলবাদের থাবা সেখানে জাঁকিয়ে বসেছে। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস’ আলোচনা সভা ও দোয়ার মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে‌ছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। কিন্তু প্রতিবারের সেই চেনা ছবি? এবার পেট্রাপোলে ভাষা দিবসে অনিশ্চিত বাংলাদেশ। একুশে ফেব্রুয়ারি জিরো পয়েন্টের অনুষ্ঠানে প্রতিবছরই থাকেন দুদেশের প্রতিনিধি। কিন্তু এবার? তাহলে কি হবে না শহীদ স্মরণ? 

বনগাঁ পুরসভা বেছে নিল ইছামতিকে। ভারত বাংলাদেশের মধ্যে একুশে ফেব্রুয়ারির আগে হলনা কোনো বৈঠক। দেখা যায়নি তৎপরতা। আর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সেখানেও কি এবার বদলের ছবি? ‘ভাষা দিবস’এর অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রাখলেন কন্ডিশন! হুমকি আর জোর জুলুমের বাংলাদেশে এবারের ভাষা দিবস বড়ই অচেনা।

একুশে উপলক্ষে ঢাকা শহরের শহিদ মিনার এলাকায় আলপনা আঁকা হয় রাস্তায়। আগের দিন বিকেলের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা সারা রাত ধরে রাস্তায়, দেওয়ালে এবং শহিদ মিনারের বেদিতে আলপনা আঁকেন। বাংলা বর্ণমালা নিয়ে ক্যালিগ্রাফিও থাকে তার মধ্যে। সারা রাত জেগে ফুলের মালায় লিখে চলা পাড়ার নাম, স্কুলের নাম। সূর্যোদয়ের আগে সবাই একটা জায়গায় জড়ো হয়ে খালি পায়ে রওনা দেওয়া। পরনে সাদা-কালো পোশাক। লম্বা মিছিল, কিন্তু সুশৃঙ্খল। সারা পথ জুড়ে খালি গলায় গাওয়া, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...’। 

প্রতিবছরই একুশের প্রথম প্রহরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন রাষ্ট্রপতির। এই ছবিটা পুরনো। কিন্তু এবার নতুন বাংলাদেশে কেমন হবে একুশে ফেব্রুয়ারি? আগামীকাল ২১ শে ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশ এবারেও কি একুশে ফেব্রুয়ারির সেই ঐতিহ্য, সেই আবেগ, সেই গর্বকে ধরে রাখতে পারবে? অলরেডি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে ভাষা দিবসের আগে। যে রাষ্ট্রপতি ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পরেই বাকিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় শহীদ মিনার ,এবার ভাষা দিবসের আগে শহীদ মিনারে এই রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেই না যাওয়ার হুঁশিয়ারি ছাত্রদের। 

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের তরফে দেশের সাংবিধানিক প্রধানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে 'যদি অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে না চান, তাহলে ভাষা দিবসের শহীদ মিনারের পথ মারাবেন না। হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে যদি শহীদ মিনারে পা রাখেন তাহলে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।' বার্তা স্পষ্ট, রাষ্ট্রপতিকে ছাড়াই ভাষা দিবসের মূল অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ‘জুলাই বিপ্লব’-এর সুতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেও পা রাখতে পারবেন না বলে ‘ফতোয়া’ দিয়েছে ওই সংগঠনটি। শুধু রাষ্ট্রপতিকেই ব্রাত্য করা হয়নি। এবারের ভাষা দিবস ভাগাভাগির। আমরা ওঁরা'র। আসলে এই শুরুটাই হাসিনা সরকারের পতন থেকে। সেই রেশ থাকছে এবারের ভাষা দিবসেও। 

বাংলাদেশের এই মুহূর্তে যা স্ট্যাটাস বা লেটেস্ট আপডেট, তাতে দেখা যাচ্ছে আওয়ামি লিগ ও তাদের সহযোগী রাজনৈতিক দলগুলিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকার রাজু ভাস্কর্যে অবস্থানে বসেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। তার মধ্যে অন্যতম বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেই এই সংগঠনটি তৈরি হয়েছে। আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ বলেছেন, ‘জুলাই-আগস্টে আমরা দু’হাজারের বেশি ভাইবোনকে হারিয়েছি। কিন্তু পুরো ঘটনার সময় রাষ্ট্রপতি চুপ করে ছিলেন। উনি হাসিনার অবৈধ নির্বাচনের অবৈধ এমপিদের ভোটে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। হাসিনা ও অন্যরা পালিয়েছেন। সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রপতি হিসেবে মহম্মদ সাহাবুদ্দিন বহাল রয়েছেন। পদত্যাগের দাবি জানানো হলেও তিনি সরে যাননি।’ 

ওয়াহেদের বক্তব্য, ‘আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, সাহাবুদ্দিনকে জনগণ জনপরিসরে দেখতে চায় না।’ এদিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দাবি করেছেন, আওয়ামি লিগকে শুধু নিষিদ্ধ নয়, বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে হবে। অতএব এটা পরিষ্কার, ভাষা দিবসেও রাজনৈতিক প্রভাব থাকছে এবার ইউনুসের নতুন বাংলাদেশে। 

যে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জাতিসত্তা ও ভাষাভিত্তিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষা সহ সকল সংগ্রাম ও আন্দোলনের উৎস এবং প্রেরণা, সেই ভাষা দিবসে যেভাবে বিভাজন বা ভেদাভেদ দেখা যাচ্ছে ওপার বাংলায়, তা বড়ই যন্ত্রণার বলছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। এক্ষেত্রে অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কথা বাংলাদেশে। এবারেইতো ঢাকার বুকে হয়েছে উর্দু কবিতা পাঠ, উর্দু গান। 

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাহলে কি বাংলাদেশ ক্রমেই হয়ে উঠছে উর্দুদেশ বা উর্দুস্তান? সেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস এবারে যে ছবি বহন করবে, সেই দিকেই তাকিয়ে আপামর বাঙালি। যদিও, ভারতীয় সীমান্তের স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, বাংলার তরফে ভাষা দিবসের যে অনুষ্ঠান সীমান্ত এলাকায় করা হত, তা এবারও করা হবে। তবে বনগাঁ পৌরসভার তরফে এক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে ইছামতি নদীর পাড়কে। এখন দেখার, অমর একুশে ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক, বাঙালি মননে, বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে এবার কতটা কি প্রভাব ফেলে।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন