সমকালীন প্রতিবেদন : দার্জিলিং, কালিঙ্পং, কার্শিয়াং তো অনেক হলো। এবার নতুন হিল স্টেশন 'চটকপুর'। প্রকৃতি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে এই প্রত্যন্ত গ্রামকে। ওখানে পৌঁছালেই আপনি আপন মনে গেয়ে উঠবেন "আহাঃ, কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!"
সিঞ্চল ওয়াইল্ড লাইফ স্যানচুয়ারির অন্তর্গত ছোট গ্রাম চটকপুর। পাহাড়ের কোলে মনমুগ্ধকর এই জায়গাটি অবস্থিত দার্জিলিং থেকে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরে। এই চটকপুর আসলে একটি ইকো ভিলেজ। এই গ্রামে সবকিছুই পরিবেশবান্ধব। ৭৮৮৭ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ছোট্ট মায়াবি গ্রামটিতে আপনি একদিকে উপভোগ করতে পারবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য, অন্যদিকে আপনার মনকে হরণ করবে এখানকার পাহাড়ের মাদকতা।
শহুরে কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটানোর জন্য চটকপুর একটি উপযুক্ত স্থান হিসেবে আপনি বেছে নিতে পারেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও এখান থেকে দেখতে পাওয়া কাঞ্চনজঙ্ঘাই হল এখানকার মূল আকর্ষণ। শিলিগুড়ি থেকে অনতিদূরে অবস্থিত এই স্থানটি সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর জন্য আপনাকে ঠকাবে না। হোমস্টের ঘরে বসে সৌরভে ভরপুর চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে পাখিদের আওয়াজে ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শনে আপনার মন ভরে উঠবে।
এছাড়াও এখানকার আর একটি বৈশিষ্ট্য হল, এখানকার হোমষ্টেগুলিতে যেসব শাক-সব্জি খওয়ানো হয়, সেগুলি সব তাদের নিজের বাগানে চাষ করা হয়, যা একদম জৈব পদ্ধতিতে উৎপাদিত। কোনরকম কেমিক্যাল যুক্ত সার ব্যবহার করা হয় না। ফলে আপনি পাবেন একদম খাঁটি খাবার। এছাড়াও এই গ্রামে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত।
এই গ্রামটিতে বাস ১৯ টি পরিবারের। চটকপুর গ্রাম পর্যটন কেন্দ্র শুরু হয়েছে মাত্র এক দশক আগে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে পর্যটকদের আনাগোনা। পাহাড় ঘেরা ছোট্ট এই গ্রামটিতে মন মাতানো পরিবেশ হৃদয় হরন করে নেয় পর্যটকদের। যে পর্যটকেরা একবার এই গ্রামটিতে আসেন, তারা কখনোই ভুলতে পারেন না চটকপুরকে।
স্থানীয় এক হোমষ্টের মালিক জানাচ্ছেন যে, বর্ষার সময় অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস বাদ দিলে বছরের বাকি সময়গুলিতে পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে। খুব বেশি পরিমাণ লাভ না হলেও বেশ স্বাচ্ছন্দেই দিন কাটছে তাদের। তবে এই গ্রামের বাসিন্দারা সম্পূর্ণভাবে পানের জন্য ঝর্ণার জলের উপর নির্ভরশীল। তাদের সরকারের কাছে অনুরোধ যে, পানীয় জলের ব্যবস্থা ও স্থানীয় একটি চিকিৎসা কেন্দ্রের ব্যবস্থা করলে এই গ্রামের সকল অধিবাসী ব্যাপক পরিমাণে উপকৃত হবেন।
যাতায়াত - চটকপুর পৌঁছানোর জন্য আপনারা শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড বা এন জি পি থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাদের গাড়ি ভাড়া লাগবে আনুমানিক ২৫০০-৩০০০ টাকা। অথবা শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে শেয়ার গাড়ি ধরে সনাদা পর্যন্ত আসতে পারেন। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে চটকপুর চলে আসতে পারেন। এছাড়াও, হোমস্টের মালিককে বললে তিনি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন।
থাকা খাওয়া - যেহেতু এটি একটি অভয়ারণ্যের অন্তর্গত, তাই এখানে থাকার জন্য কয়েকটি হোমষ্টে পাবেন, যার খরচ খুব বেশি নয়। প্রত্যেক হোমষ্টেতে চারবেলার খাবার দেবে, যা ভাড়ার মধ্যেই ধরা থাকবে। গতানুগতিক ভ্রমণস্থান থেকে এই জায়গা একটু অন্যরকম। শুধু পর্বতের মাথায় বসে এখানকার প্রকৃতিকে দু'চোখ ভরে দেখা আর হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন