সমকালীন প্রতিবেদন : সংসারের বোঝা হিসেবে ৮৫ বছরের বৃদ্ধা ঠাকুমাকে অচেনা অজানা এলাকায় রাস্তার ধারে ফেলে রেখে পালালো গুনধর নাতি। অবশেষে পুলিশের সহযোগিতায় ওই বৃদ্ধাকে নিজের বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা হল। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে গোপালনগর থানা এলাকায়।
জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বর মাসে গোপালনগর থানা এলাকার একটি বড় রাস্তার ধারে ৮৫ বছর বয়সের এক বৃদ্ধাকে বসে থাকতে দেখেন যুবকেরা। পথ চলতি মানুষদের তিনি জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, 'দেখতো বাবা আমার নাতিটা এখনো আসে না কেন। বলে গেল এখনই আসছি'।
এক মনে নাতির উদ্দেশ্যে ওই বৃদ্ধ বলতে থাকেন যে, তার নাতি বাবু যেন তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কোথায় তাঁর নাতি। আসলে যে নাতিকে ছোটবেলা থেকে কোলেপীঠে করে বড় করে তুলেছেন, সেই নাতিই আজ তাঁকে এই অচেনা অজানা জায়গায় ফেলে রেখে এক প্রকার চোরের মত পালিয়ে গেছে। অথচ বৃদ্ধা তার কিছুই টের পাননি।
স্থানীয়রা তাঁকে তাঁর নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলেও তিনি কিছুই বলতে পারেননি। শুধু বলেন এইতো সামনেই তাঁর বাড়ি। এরপর স্থানীয়রা একটি টোটোতে করে এলাকার এদিক-ওদিক ঘুরেও বৃদ্ধার বাড়ির সন্ধান না পেয়ে অবশেষে গোপালনগর থানার দ্বারস্থ হন। যদিও ততক্ষণে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই বৃদ্ধা।
এরপর পুলিশ ওই বৃদ্ধাকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সোমদত্তা বসু যোগাযোগ করেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে। তারাই এরপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারে যে, ওই বৃদ্ধার বাড়ি নদীয়া জেলার শিমুরালি পালপাড়া এলাকায়।
তবে আশ্চর্যের বিষয় কয়েকদিন কেটে গেলেও বৃদ্ধার পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় কোন নিখোঁজের ডায়েরি করা হয়নি। আর তাতেই পুলিশের বধ্যমূল ধারণা, ওই বৃদ্ধাকে রাস্তায় ইচ্ছাকৃতভাবেই অচেনা এলাকায় ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল, যাতে তিনি আর বাড়ি ফিরে যেতে না পারেন।
বিষয়টি অবশ্য পুলিশ সহজভাবে নেয়নি। একপ্রকার ধমক দিয়েই পুলিশ পরিবারের সদস্যদেরকে বনগাঁ হাসপাতালে এসে বৃদ্ধাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। আর সেই মতোই আজ বৃদ্ধার ছোট ছেলে অনন্ত হালদার তাদের ফেলে যাওয়া মাকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান। পাশাপাশি এও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন তারা প্রতি সপ্তাহে স্থানীয় থানায় গিয়ে হাজিরা দিয়ে মায়ের খবর পুলিশকে দিয়ে আসে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন