Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

চরস তৈরি করে মাথাপিছু দৈনিক ১০ হাজার টাকা আয় ভারতের এই গ্রামে

 

Mysterious-village-Malana

সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতের এক অদ্ভুত রহস্যময় গ্রাম মালানা। এই গ্রামে অনায়াসেই ঢোকা যায়, রাস্তা দিয়ে হাঁটা যায়, কিন্তু কিছু ছোঁয়া যায় না। কারণ জানলে ছিটকে যাবেন! এই গ্রামের 'ফেমাস' মালানা ক্রিম আসলে কি? জানেন? বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক গ্রাম নাকি মলানা ক্রিম? কীসের টানে মানুষ ছুটে যায় এই গ্রামে? আইন, ভাষা সবটাই নিজস্ব। "চরস" এর উপর শুয়ে আছে মালানা। রহস্যময় এই গ্রামে লুকানো সম্পূর্ণ আলাদা একটা জগৎ। ১২ মাসের মধ্যে মাত্র ৩ মাসেই হয় আসল কাজ। মালানা গ্রামে কিভাবে বাঁচে মানুষ? জানুন আসল ফ্যাক্ট।

কুল্লু জেলার পার্বতী উপত্যকার উত্তর-পূর্বে ঢালাও সৌন্দর্য নিয়ে, পাহাড়ের কোলে ছবির মতো সুন্দর হিমাচলের প্রাচীন গ্রাম মালানা। মালানা গ্রামে স্কুল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট‌– সব কিছুই আছে, আর সঙ্গে আছে রহস্যের আধার। মালানার পরিচিতি ‘চরস গ্রাম’ নামে। দাবি করা হয়, এখানে বিশ্বের অন্যতম উন্নতমানের চরস পাওয়া যায়, যা ‘মালানা ক্রিম’ নামে পরিচিত। যা খুব ফেমাস, তৈরি হয় ক্যানবিস গাছ থেকে। এখানে সব কিছুই চরস ঘিরে। চরস যে গাছ থেকে তৈরি হয়, বছরে তিন মাস সেই গাছ জন্মায়। তাই এই তিন মাস চরম ব্যস্ততায় কাটে গ্রামবাসীদের, পুরোটাই চরস তৈরীর কারণে। বছরের বাকি ৯ মাসের উপার্জন এই তিন মাসেই আয় করে নেওয়ায় ব্যস্ত থাকেন মালানা গ্রামের মানুষ। 

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তিন মাসে মালানা গ্রামে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার চরস তৈরি হয়। সারাদিন চরস তৈরি করে এক এক জন ১০ হাজার টাকা আয় করেন। একজন দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করলে ১২ গ্রাম চরস তৈরি করতে পারেন। ১০ গ্রাম চরসের দাম ৮ হাজার টাকা। একদিনে প্রায় সাড়ে ১৪ কেজি চরস তৈরি হয় গ্রামে। যার দাম এক কোটি টাকার বেশি। 

হিসেব বলছে, মাসে ৪৩২ কেজি চরস তৈরি করে এই গ্রাম। সেই চরস বিক্রি করে ৩৬ কোটি টাকা আয় হয়। তিন মাসে মোট ১০৮ কোটি টাকার ব্যবসা হয় এই গ্রামে। মালানায় নিজেদের শাসন, আইন চলে। বাইরের মানুষ এই গ্রামে ঢুকতে পারলেও, এখানে এতো রকম বিধিনিষেধ যে, সেসব লঙ্ঘন করলেই নেমে আসে শাস্তির খাঁড়া। দিতে হয় মোটা অঙ্কের জরিমানাও। যেমন, বাইরের কোনও লোক গ্রামবাসী এবং তাঁদের কোনও জিনিস ছুঁতে পারবেন না। 

বহিরাগতদের থেকে তাঁরা সব সময় একটা দূরত্ব বজায় রাখেন। হ্যাঁ, গ্রামে বাইরের লোক আসতে-যেতে পারেন। ঘুরে দেখতে পারেন চারদিক চোখ জুড়িয়ে দেওয়া প্রাকৃতিক দৃশ্য। কিন্তু আপনি এই গ্রামের কোনও বাড়ি, গাছ, কোনও স্থাপত্য এমনকি কোনও গ্রামবাসীকেও ছুঁতে পারবেন না। প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, হয়তো বা জাতপাতের কারণে এমন নিষেধাজ্ঞা! কিন্তু না, আসল কারণ মোটেও তা নয়! তাহলে কেন এমন অদ্ভুত নিয়ম? 

গ্রামবাসীদের দাবি, তাঁরা 'অ্যালেক্সানডার দ্য গ্রেট'-এর বংশধর। তাঁদের শরীরে বইছে আর্য রক্ত। কাজেই তাঁদের ধারণা, তাঁরা বাইরের গোটা দুনিয়ার থেকে উচ্চতর। তাই কাউকে নিজেদের ছুঁতে দেন না। তাঁরা বাইরের দুনিয়ার সঙ্গেও মেশেনও না। তবে, নিজেদের বা এই গ্রামের কোনও জিনিস ছুঁতে না দিলেও, এই গ্রামের মানুষ কিন্তু খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ। এরকম এক নয়, একাধিক অদ্ভুত বিষয় রয়েছে এই গ্রাম জুড়ে। এই গ্রামের আছে একটি নিজস্ব ভাষা। যে ভাষা কানাশি নামে পরিচিত। গোটা হিমাচল প্রদেশে যার কোনও ব্যবহার নেই। 

আবার গ্রামে কোনও ঘটনায় পুলিশের মধ্যস্থতাকে অনুমতি দেওয়া হয় না। বরং কেউ কোনও অপরাধ করলে গ্রাম পরিষদই তার শাস্তির ব্যবস্থা করে। কোনও অভিযুক্ত যদি পুলিশের সহযোগিতা চান, তা হলে তাঁকে জরিমানা করে গ্রাম পরিষদ। এখানে গ্রাম পরিষদই সব কিছু। নামেই পঞ্চায়েত আছে, সবকিছুই হয় গ্রামবাসীদের সিদ্ধান্তে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,৭০১ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠেছে এই গ্রাম। ৬২৫টি পরিবারের বাস এই গ্রামে। মোট জনসংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। গ্রামে ঠাকুর সম্প্রদায়ের মানুষই বেশি। হরিজন সম্প্রদায়ের লোকেরা গ্রামের বাইরে থাকেন। 

কিভাবে পৌঁছবেন? কুলু থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই গ্রাম। কুলু থেকে সেখানে পৌঁছতে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। ২ ঘণ্টা গাড়িতে, আর ২ ঘণ্টা পাহাড়ের চড়াই-উতরাই বেয়ে হেঁটে উঠতে হয়। তার পরেই ঢুকে পড়া যায় মালানার রহস্যময় জগতে। তবে যাওয়ার আগে মাথায় রাখবেন, মালানায় ছবি তোলায় কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু কোনও ভিডিয়ো করা যাবে না।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন