সমকালীন প্রতিবেদন : শীতের শুরুতেই পরিযায়ী পাখিরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে যায়। পরিযায়ী পাখির সে বিভিন্ন ভ্রমণ পথ। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার! ভেবে দেখেছেন এই পথ তারা চেনে কিভাবে? বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার, গোটা পৃথিবীতে মোট ৯টি পরিযায়ন পথ ব্যবহার করে পাখিরা ভ্রমণ করে। কিন্তু সেই পথ কিভাবে তৈরি করে এই পরিযায়ী পাখিরা? বছরের নির্দিষ্ট সময়ে একেবারে ঘড়ি ধরে কী করে হাজির হয় তারা?
হিসেব বলছে, পৃথিবীতে প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে। এদের প্রায় ১৯ শতাংশ পরিযায়ী পাখি। ইংরেজিতে যাদের নাম হলো মাইগ্রেটরি বার্ডস। শীতপ্রধান দেশের এইসব পাখিরা শীতকালে তাদের নিজ বাসভূমি ছেড়ে উড়ে চলে যায় হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে নাতিশীতোষ্ণ কোনো অঞ্চলে। আসলে এই পরিযায়ী পাখিদের অসীম ক্ষমতা। দারুন স্মৃতিশক্তি। তাদের পথ দেখায় চিরকালীন 'গুগল ম্যাপ'।
ওই যে আকাশের সূর্য-তারা। সূর্যের সঙ্গে দিগন্ত বরাবর রেখা ধরে দিকচিহ্ন তৈরি করে এই পাখিরা। একইভাবে রাতের আকাশে তারাদের অবস্থান চিনে রাখে ওরা। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাদের জন্য, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র। মনে করা হয়, পাখিরা তাদের সিক্স্থ সেন্স ব্যবহার করে চিনে নেয় গতিপথ। বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, পাখিদের চোখের 'কোয়ান্টাম এফেক্টস' তাদের সাহায্য করে চৌম্বকক্ষেত্রের রেখাগুলোকে চিনে নিতে।
না শুধু এটুকুই নয়। মানুষের মতোই পাখিরা 'ল্যান্ডমার্ক' তৈরি করে। তবে সেটা মনে মনে। এই ধরুন পুকুর, নদী, পাহাড়, টিলা কিংবা গাছ। এসব দেখে দেখে তারা উড়ে চলে দিব্যি। পাশাপাশি, পাখিদের আর একটা বড় ভরসার জায়গা গন্ধ। গন্ধের স্মৃতিকেও কাজে লাগিয়ে পথ চিনে রাখতে পারে পরিযায়ী পাখিরা। হয়তো এমন আরো কিছু আছে, যা পরিযায়ী পাখিদের সাহায্য করে পথ চিনতে। সেই অপশনটা হয়তো মানুষের জানা নেই।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, শুধু বড় বড় পাখিরাই নয়, ছোট পাখিরাও অনায়াসেই পথ চিনে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়। একটু তলিয়ে ভাবলে হতবাক হয়ে যেতেই হয়। হ্যাঁ পরিযায়ী পাখির দল অন্যান্য দেশের মতো বাংলাতেও আসে বৈকি। ঝাকে ঝাকে রংবেরঙের পরিযায়ী পাখিরা চামড়ায় টান ধরার সময়টায় খুঁজে নেয় নিজেদের আশ্রয়। তবে পরিমাণ অনেক কমেছে। এটা সত্যি। কারণটাও হয়তো অজানা নয় আমাদের।
জলাভূমি বুজিয়ে ফেলা এদের বিপদ বাড়িয়েছে। সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন মানে তাপমাত্রা বাড়তে থাকা, সেটাও তো কম সমস্যার বিষয় নয়। কিংবা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পাশাপাশি, নগরায়ন কিংবা দূষণের মতো বিপদও আছে। সব মিলিয়ে মানুষের বদভ্যাসে আলতো উষ্ণতার খোঁজে পরিযায়ী পাখিদের পাড়ি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তবু ভরসা বুকে নিয়ে ওরা উড়ে আসে। থিতু হয়। বুঝিয়ে দিয়ে যায়, অন্ধকারের বুক চিরে আলোকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হলেও, অসম্ভব নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন