সমকালীন প্রতিবেদন : ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর—যে বাড়িটি একসময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, আজ সেটি শুধুই এক স্তূপে পরিণত হল। রাতভর বুলডোজারের তাণ্ডবে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত এই ঐতিহাসিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেও চলছিল ভাঙার কাজ। কেউ বলছেন, ‘এটি ছিল স্বৈরাচারের প্রতীক’, আবার কেউ কাঁদছেন—‘এটাই কি ইতিহাসের শেষ পরিণতি?’
বুধবার বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশবাসীর উদ্দেশে ভার্চুয়ালি ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখনই ৩২ নম্বর ধানমন্ডি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিল। আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগ আগেই ঘোষণা করেছিল ভাষণ সম্প্রচারের, কিন্তু হাসিনার বিরোধীরা তখনই সোচ্চার হন। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ‘মার্চ টু ধানমন্ডি ৩২’ কর্মসূচির ডাক। রাত নামতেই উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
জনতা প্রথমে বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙচুর করে, তারপর অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। রাত বাড়তেই আরও আগ্রাসী হয় পরিস্থিতি। বুলডোজার, ক্রেন, ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়। রাত ১১টা নাগাদ ভাঙার কাজ শুরু হয়। গোটা রাত ধরেই চলে এই তান্ডবলীলা।
বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে বাড়ির সামনের অংশ ধসে পড়ে। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত চলে ভাঙার কাজ। এক সময় যেখানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা হয়েছিল, আজ সেখানে শুধুই ধুলোর স্তূপ!
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছকই একটি ভবন নয়, এটি এক ইতিহাসের অংশ। কেউ বলছেন, ‘স্বৈরাচারের চিহ্ন মুছে ফেলতে হবে’, আবার কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘এই ঐতিহাসিক স্থাপনার এমন পরিণতি কি কাম্য ছিল?’
বুধবারের ভাষণেই হাসিনা বলেছিলেন, “ধানমন্ডির ৩২ নম্বর থেকে জাতির পিতা স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। পাকিস্তানিরা তখনও এই বাড়িটিতে লুটপাট চালিয়েছিল। কিন্তু আগুন দেয়নি, ভাঙেনি। অথচ আজ সেটিই করা হলো!”
তিনি আরও বলেন, “আমার মা নিজের হাতে এই বাড়ির প্রতিটি ইট গেঁথেছিলেন। এত বড় বড় রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান এই বাড়িতে এসেছেন, আজ সেটিই গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন? এই বাড়িটির কী অপরাধ? এত ভয় কিসের?”
৩২ নম্বর ধানমন্ডির ধ্বংস নিয়ে বাংলাদেশজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা। কেউ বলছেন, এটি ছিল একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা, আবার কেউ মনে করছেন, ইতিহাসের একটি কালো দিন হিসেবে থেকে যাবে এই মুহূর্ত। সময়ের চাকা ঘুরবে, কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাবে—এই ঘটনাকে কীভাবে মনে রাখবে আগামী প্রজন্ম?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন