সমকালীন প্রতিবেদন : হাইকোর্টের হস্তক্ষেপে অবশেষে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পারলো বনগাঁর দুই ছাত্রী। জীবনের প্রথম বন পরীক্ষায় বসা নিয়ে যে হেনস্থার শিকার তাদের হতে হয়েছে, তাতে একসময় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল তারা। অবশেষে পরীক্ষায় বসতে পেরে খুশি তারা।
এই বিভ্রান্তি ঘটেছে নিউ বনগাঁ গার্লস হাইস্কুলের দুই ছাত্রীর সঙ্গে। স্কুল সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য যখন ফর্ম ফিল-আপের কাজ চলছিল, তখনই স্কুল কর্তৃপক্ষ দেখে যে, বোর্ড থেকে তিনজন ছাত্রীর আবেদনপত্র আসে নি। অথচ, অন্য এক ছাত্রীর নামে দু’টি ফর্ম এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই হতবাক্ হয়ে যায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। চিন্তায় পড়ে যায় ছাত্রীদের অভিভাবকেরা।
এরপর থেকেই শুরু হয় এক লম্বা লড়াই। স্কুল কর্তৃপক্ষ এরপর মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সঙ্গে বারংবার যোগাযোগ করে। কিন্তু কিছুতেই সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে এব্যাপারে স্কুল শিক্ষা দপ্তর এবং শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন বনগাঁ পুরসভার প্রধান গোপাল শেঠ। কিন্তু তাতেও জট কাটে নি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ জানিয়ে দেয়, তাদের কিছু করার নেই।
তবে এক্ষেত্রে স্কুল কর্তৃপক্ষের যে গাফিলতি ছিল, তা শিকার করে নেন নিউ বনগাঁ গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সোমা সরকার। তিনি বলেন, স্কুলের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য ওই ছাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বিষয়টি নজরে আসার পর স্কুলের পক্ষ তেকে একাধিকবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কলকাতার অফিসে যাওয়া হয়। কিন্তু তারা কোনওরকম সহযোগিতা করে নি।
এই অবস্থায় একসময় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ছাত্রীদের পরিবার। চিঠি পাঠানো হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে। ছাত্রীদের সমস্ত নথি নিয়ে হাইকোর্টে হাজির হয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। নথি দেখে সন্তুষ্ট হয়ে ওই ছাত্রীদের পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করার জন্য মদ্যশিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দেন বিচারক। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে অ্যাডমিট কার্ড পায় ওই ছাত্রীরা।
আদালতের নির্দেশে শেষ পর্যন্ত মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসতে পারল নিউ বনগাঁ গার্লস হাইস্কুলের দুই ছাত্রী স্নেহা দে ও সোনালী দাস। দীর্ঘ দু মাসের লড়াই, প্রশাসনিক জটিলতা আর অনিশ্চয়তার অবসান ঘটল। সোমবার তারা বনগাঁ কুমুদিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্রে হাসিমুখে প্রবেশ করল।
এদিন প্রথমদিনের পরীক্ষা দিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফেরে ওই দুই ছাত্রী। তবে অভিভাবকদের ক্ষোভ এখনও যায় নি। তাঁদের প্রশ্ন, "এই গাফিলতির দায় কে নেবে? যদি আদালতে না যেতাম, তাহলে কি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যেত?" তাঁরা চান, এমন ঘটনা যেন আগামীদিনে আর কোনও পরীক্ষার্থীর ক্ষেত্রে না ঘটে।
শুধু বনগাঁর এই দুই ছাত্রীর ক্ষেত্রেই নয়, অ্যাডমিট কার্ডের এই বিভ্রাট রাজ্যের বহু জেলার পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। এই ঘটনা আরও একবার শিক্ষাব্যবস্থার গলদকে সামনে আনল। ফর্ম ফিল-আপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ায় এমন অনিয়ম কেন? কেনই বা স্কুল ও পর্ষদের মধ্যে সুসমন্বয়ের অভাব? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এমন গাফিলতি যদি চলতে থাকে, তাহলে পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে আগামীদিনেও আরো অনেক ছাত্রছাত্রীকেই হয়তো আদালতের দারস্থ হতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন