সমকালীন প্রতিবেদন : মহাকাশে সুনীতা উইলিয়ামস আরো বেশি রুগ্ন। জানেন, ওখানে কি খেয়ে বেঁচে আছেন সুনিতারা? রুটি-চিনি-নুন নিষিদ্ধ মহাকাশে। তাহলে, কি থাকছে মহাকাশচারীদের মেনুতে? কিভাবে কাটাচ্ছেন জীবন? টানছে বাড়ির খাবার। হয়েছেন রোগা। দেখাচ্ছে ক্লান্ত। শূণ্য মাধ্যাকর্ষণের কারণেই বাড়ছে টেনশন। সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরা কি সত্যিই অনিশ্চিত?
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, সাম্প্রতিক ছবিতে সুনীতা যথেষ্ট রোগা ও ক্লান্ত। চেহারা ভাঙা। রক্তচাপেও পড়ছে প্রভাব। একটা প্রশ্নই উঠছে, তবে কি ভালো নেই সুনীতা? সকলেরই আগ্রহ মহাকাশচারীদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে। সুনীতাদের খাওয়া-দাওয়ারই বা কি অবস্থা? আসলে মহাকাশে খাবার বাছাই করতে হয় মাইক্রোগ্র্যাভিটির কথা মাথায় রেখে। এমন কিছু মহাকাশে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ, যা থেকে বিপদ ঘটতে পারে। যেমন সেখানে রুটি খাওয়া একেবারেই নিষেধ। কারণ রুটি মহাকাশ স্টেশনের বায়ুমণ্ডলে ভাসতে শুরু করে এবং এর টুকরো মহাকাশচারীদের চোখে ঢুকে গিয়ে কোনও ক্ষতি করতে পারে। এমনকি কুকিজ, বিস্কুট, টোস্টের মত জিনিসও মহাকাশে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। আসলে, এই সব খাবারের টুকরো মহাকাশে ভাসতে শুরু করে। আবার এই ধরনের খাবার চিবিয়ে গেলার সময় তা মহাকাশচারীদের গলায় আটকেও যেতে পারে।
চিনি, নুনের মতো খাদ্যদ্রব্যও কিন্তু মহাকাশে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। কারণ, সেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি না থাকায় নুন বা চিনি চারিদিকে ভেসে বেড়াতে শুরু করবে। যা মহাকাশচারীদের চোখ, নাক ও মুখে আটকে যেতে পারে। তাই মহাকাশে খেতে হয় চিনি ও নুন ছাড়া খাবারই। না। কোল্ড ড্রিঙ্কস বা তাজা দুধ, সেইসবও অ্যালাউড নয় মহাকাশে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি, এই দুটো বিষয়কে মাথায় রেখেই মহাকাশচারীদের জন্য খাবার তৈরি করা হয়।
প্রতিটি মিশনের আলাদা আলাদা খাবার মেনু হয়। মেনুতে থাকে শাকসবজি, ফল, মিষ্টি জাতীয় খাবার। এছাড়াও, একশোরও বেশি ধরনের খাবার থাকে। মিশন শুরু হওয়ার আগেই মহাকাশচারীদের খাবারের তালিকা তৈরি হয়ে যায়। অনেকদিন মহাকাশে থাকার জন্য খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেটাও যেন না হয়, সেইজন্য বিজ্ঞানীদের হালকা, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার বাছাই করতে হয়।
কি কি নিয়ে যেতে পারেন বেসিক্যালি মহাকাশচারীরা মহাকাশে? মহাকাশচারীরা ডিহাইড্রেটেড দুধ নিয়ে যান। এতে তাঁদের খেতে সুবিধা হয়। হ্যাঁ, মহাকাশচারীদের যেকোনো খাবার প্রায়ই ডিহাইড্রেটেড এবং ভ্যাকুয়াম-সিলড পাউচে প্যাকেট করা হয়। খাবারে থাকে স্যান্ডউইচ বা রিহাইড্রেটেবল স্যুপ। কেচাপ এবং সরষের মতো মশলা মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে ভাসতে থাকে। তাই এগুলো বিশেষ ধরনের প্যাকেটে পাওয়া যায়। ডিনারে ফ্রিজে রাখা শুকনো করা মাংসের স্টু, চিকেন কারি বা পাস্তা খান। মেনুতে থাকে পুডিং বা ফলও।
মোদ্দা কথা, মহাশূন্যে থাকাকালীন যেহেতু ওজন কমে যায়, তাই উচ্চ ক্যালোরির খাবারই খেতে হয়। সুনীতারাও যাতে তেমন খাবার পান, সেদিকেই নজর রাখা হচ্ছে। আর এখন নিয়ম অনেকটাই বদলেছে। নাসার অ্যাপোলো মিশন থেকেই দেখা গিয়েছে, মহাকাশচারীদের পছন্দের খাবারই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। কোরিয়ার এক মহাকাশচারী স্পেস স্টেশনে যাওয়ার সময়ে তাঁর দেশের ঐতিহ্যবাহী পদ কিমচি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁকে নাকি সেটাই দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের মহাকাশচারীদের কথা মাথায় রেখে তাই এখন খাওয়াদাওয়াতেও বৈচিত্র্য আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
কিন্তু এটা তো ফ্যাক্ট, ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে পাক খেয়ে চলা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের শূন্য মাধ্যাকর্ষণে দিনের পর দিন থেকে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার কাজ কেবল কঠিনই নয়, কঠিনতম বললেও ভুল হবে না। মাইক্রোগ্র্যাভিটি বা শূন্য মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব একজনের শরীরকে কতটা নাস্তানাবুদ করতে পারে, তা কেবল মহাকাশ স্টেশনে থাকা একজন মহাকাশচারীই বলতে পারবেন। এই সময় তরল জমা হতে থাকে মস্তিষ্কে, দুর্বল হয়ে পড়ে রোগ প্রতিরোধশক্তি। পেশির দুর্বলতা দেখা দেয় মহাকাশচারীদের। ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাও থাকে। তাই শরীর দুর্বল হলে বা কোনও অসুখবিসুখ থাকলে পরিণতি বিপজ্জনকও হতে পারে। সেই সঙ্গে মহাজাগতিক বিকিরণের ঝাপটা তো আছেই। সব সয়ে মহাকাশ স্টেশনে সাত দিন কাটানোই বড় চ্যালেঞ্জ। সেখানে সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সতীর্থ বুচ উইলমোর ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্দি রয়েছেন মহাকাশ স্টেশনে।
পাশাপাশি, মহাশূন্যে দীর্ঘদিন থাকার কারণে আরও যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় মহাকাশচারীদের, তা হল মানসিক সমস্যা। পরিবার ও সমাজ থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে মনের উপর চাপ তো পড়েই, মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতিও হয় অনেক ক্ষেত্রে। ঘুমের সমস্যাও খুবই ভোগায় মহাকাশচারীদের। ফলে, এসব কিছু সহ্য করে সুনীতারা মহাকাশে নিজেদের লড়াই কিভাবে জারি রাখেন এবং কিভাবে ফিরে আসেন পৃথিবীর বুকে, সেই অপেক্ষাতেই দিন গুনছেন সকলে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন