সমকালীন প্রতিবেদন : এই লৌকিক দেবতার কাছে গেলেই যা চাইবেন তাই পাবেন! এই বাংলার মাটিতেই বিরাজ করছেন সেই লৌকিক দেবতা। এক অদ্ভুত বিশ্বাসে ছুটছে মানুষ। জঙ্গলমহল জুড়ে রহস্যের আধার! কালুয়া ষাঁড় খুব জাগ্রত! অন্যান্য রাজ্য থেকেও ছুটে আসা শুধুমাত্র মনস্কামনা পূরণের উদ্দেশ্যে। জানেন, কারা পূজিত হন এখানে? সাড়ে তিনশো বছরের ইতিহাস একটু একটু করে জমেছে এখানে। জানুন এই লৌকিক দেবতার মাহাত্ম্য।
নয়াগ্রামের নাম শুনেছেন? জঙ্গলমহলের বুকে বেশ প্রাচীন এই গ্রাম ঘিরে আজ মানুষের কৌতুহল ক্রমেই বাড়ছে। হবে নাই বা কেন? এই গ্রামের সাথেই যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে লৌকিক দেবতা কালুয়া ষাঁড়ের ইতিহাস। নয়াগ্রামের খড়িকামাথানি ব্যস্ত এলাকা। এখান থেকে কাছেই, পাঁচ কিলোমিটার দূরে কালুয়া ষাঁড়ের থান। তার চার পাশে জঙ্গলে ঘেরা লোধা সম্প্রদায়ের বাস। তাঁদেরই উপাস্য দেবতা কালুয়া ষাঁড়।
কিন্তু এই কালুয়া ষাঁড় আসলে কে? কি বলছে ইতিহাস? ইতিহাসবিদরা মনে করছেন, প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের পুরনো এই লৌকিক দেবতার উত্থান নিয়ে রয়েছে নানা অজানা কাহিনী। শোনা যায়, গভীর শাল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে একটা কালো রঙের ষাঁড় আবার জঙ্গলের অন্ধকারেই মিশে যেত। হিংস্র বাঘের মুখে পড়ে জঙ্গলের অসহায় মানুষ ষাঁড়বাবাকে স্মরণ করত। আর ভক্তদের ডাকে ষাঁড়বাবা হাজির হয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে তাদের প্রাণ বাঁচাত।
সেই থেকে আজও নয়াগ্রাম এলাকার মানুষ ঘরের বাইরে গেলে কালুয়া ষাঁড়কে স্মরণ করে যান। হ্যাঁ এতটাই জাগ্রত। তবে এখানে মন্দির বা দেবতার কোনও মূর্তি নেই। গাছের নিচে দেবতার অবস্থান। গভীর জঙ্গলের মধ্যে থানটির চারদিকে পোড়ামাটির ছোট বড় হাতি ঘোড়া। এগুলো দিয়েই পুজো দেওয়ার রীতি এখানে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার ছাগল মুরগি বলি হয়।
পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন এখানে বসে বিরাট মেলা। কালুয়া ষাঁড়কে দুম অর্থাৎ মদ দিয়ে পুজো দেওয়ার চল আছে। কিন্তু, গা ছমছমে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ওই থানে পৌঁছনোই এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবুও, মনস্কামনা পূরণের আশায় শুধু বাংলা নয়, ওড়িশার বহু মানুষ আসেন এখানে পুজো দিতে। আসলে ইতিহাস গবেষকরা বলছেন, মূলত লৌকিক দেবতা কালুয়া ষাঁড়।
প্রথমে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের দেবতা হিসেবে পরিচিতি হলেও ধীরে ধীরে ব্যাপ্তি ঘটে। আজ মুখে মুখে ছড়িয়েছে এই লৌকিক দেবতার কথা। সবাই বিশ্বাস করেন, কালুয়া ষাঁড় এর কাছে যা চাওয়া হয়, সেটাই মেলে। তাই তো মানুষ মাটির হাতি, ঘোড়া দিয়ে মানত করে পুজো দিয়ে যান মন ভরে। মনস্কামনা পূর্ণ হলে তারা ফের আসেন এই কালুয়া ষাঁড়ের থানে।
বড় আকারের মাটির সিমেন্টের হাতি, ঘোড়া দিয়ে যান। রূপসী জঙ্গলমহলে শাল জঙ্গলের ভেতর এই জাগ্রত দেবতার থানে যেতে পারেন আপনিও। গেলে বুঝবেন, নয়াগ্রাম থানা এলাকায় ঘুরে বেড়াতে বেশ রোমাঞ্চ হয়। আর কালুয়া ষাঁড়ের মাহাত্ম্য সেই রোমাঞ্চকে দ্বিগুণ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন