সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে ক্রমাগত উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যেই মুখ খুললেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ঢাকার এক জনপ্রিয় সংবাদপত্রকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি দেশকে স্থিতিশীল পথে ফেরাতে রাজনৈতিক দল ও সরকারের যৌথ প্রয়াসের ওপর জোর দিলেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে এসেছে প্রশাসনিক ভাঙনের কঠিন বাস্তবতা এবং সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য গণতান্ত্রিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা।
"রাজনীতি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়"
সেনাপ্রধান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, শুধুমাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্ভরশীল থাকলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, “পুলিশ, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থার পুনর্গঠন শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বেই সম্ভব। নির্বাচিত সরকার ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।” এই বক্তব্য দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যেখানে একদিকে অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকে ভোটের আগে সম্পন্ন করার পক্ষে সওয়াল করছে, অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনের আগে সংস্কারের রূপরেখা স্থির করে দায়িত্বভার নির্বাচিত সরকারের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতে অনড়।
ভোট কবে? অনিশ্চয়তার মেঘে ঘেরা দেশ
নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকারের অনিশ্চিত অবস্থান নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদে উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিকে বা ২০২৬ সালের শুরুর দিকে ভোট হতে পারে। অন্যদিকে তাঁর প্রেস সচিব বলেছেন, এই সময়সীমা আরও দীর্ঘায়িত হয়ে ২০২৬ সালের জুনে যেতে পারে। বিরোধী দলগুলোর দাবি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভোটের তারিখ সরকারিভাবে ঘোষণা করতে হবে।
“সেনাবাহিনী কখনও রাজনীতিতে মাথা গলাবে না”
অতীতে সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবিষয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেন, “আমি সেনাপ্রধান থাকাকালে আমার বাহিনী কখনও রাজনীতিতে জড়াবে না।” তাঁর এই মন্তব্য সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ অবস্থানকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে।
সংস্কার: “এটাই সুযোগ”
সংবিধান সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে জেনারেল ওয়াকার বলেন, “রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা উচিত। সশস্ত্র বাহিনী রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকতে পারে। আমি এটাকে শেষ সুযোগ বলব না, তবে এটাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানো দরকার।”
বিরোধী দলের ভূমিকার ওপর জোর
জেনারেল ওয়াকার আরও বলেন, “গণতন্ত্রে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী দল সরকারের ভুল ধরিয়ে দিতে পারে এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই প্রক্রিয়াই একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।” সেনাপ্রধানের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, তিনি দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যের গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে এই বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন