সমকালীন প্রতিবেদন : গঙ্গাসাগর মেলা, যা সাধু-সন্তদের মিলনক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত, এবার সেই চেনা রূপ হারিয়েছে। সাগর তীরবর্তী এই পুন্যতীর্থে প্রতিবছরই ভিড় জমায় অসংখ্য সাধু, বিশেষত নাগা সাধুরা। কিন্তু এবার চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। হাজারো পুন্যার্থী সাগরের জলে ডুব দিতে এলেও নাগা সাধুদের আখরাগুলি যেন ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
এবারের নাগা সাধুদের অনুপস্থিতির প্রধান কারণ মহা কুম্ভমেলা। প্রায় ১৪৪ বছর পর আয়োজিত এই মহা কুম্ভমেলার আকর্ষণ সাধু-সন্তদের সাগর মেলা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। কুম্ভমেলার গুরুত্ব ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ তাঁদেরকে সেখানে ভিড় জমাতে বাধ্য করেছে। ফলে গঙ্গাসাগর মেলায় অনেক সাধু আসেননি, আর তাঁদের অনুপস্থিতি স্থানীয় পরিবেশকে খানিকটা ফিকে করে দিয়েছে।
প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলায় পুন্যার্থীদের ভিড় উপচে পড়ে। কিন্তু যেসব বছর কুম্ভমেলা থাকে, সেই বছর তুলনামূলক কম জনসমাগম দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এই বছর সাধু-সন্তদের সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা। ফলে মেলার ঐতিহ্যবাহী আখরাগুলি বেশিরভাগ সময় ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, ১ জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার পুন্যার্থী সাগরে স্নান সেরে কপিলমুনির মন্দিরে পুজো দিয়ে গেছেন। রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস রবিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করেন। তবে সাধু-সন্ত এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, এবারের মেলার চিত্র পূর্বের তুলনায় অনেকটাই ভিন্ন। পুন্যার্থীদের সংখ্যা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যের তুলনায় অনেক কম বলে তাঁদের অভিমত।
স্থানীয় দোকানদার এবং হোটেল মালিকদের মধ্যে হতাশা স্পষ্ট। সাধু-সন্ত এবং তাঁদের ভক্তদের অভাব মেলার ব্যবসায়িক দিকটিকে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। পাশাপাশি, মেলার আধ্যাত্মিক পরিবেশেও যেন একটা শূন্যতা অনুভূত হচ্ছে। নাগা সাধুদের এই অনুপস্থিতি প্রমাণ করে মহা কুম্ভের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব কতটা গভীর।
কুম্ভমেলার প্রতি নাগা সাধুদের অগাধ বিশ্বাস এবং ভক্তি গঙ্গাসাগরের মতো ঐতিহ্যবাহী মেলাকেও প্রভাবিত করতে পারে। এই অনন্য বৈপরীত্য গঙ্গাসাগর মেলার ঐতিহ্যে একটি নতুন অধ্যায় যোগ করল, যা পুন্যার্থীদের মনে অনেকদিন থেকে যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন