সমকালীন প্রতিবেদন : জাল পাসপোর্ট চক্রের সঙ্গে পোস্ট অফিসের কানেকশন? তাহলে কি ডাকঘর আপনার জন্য সেফ জায়গা নয়? আপনি তো পোস্ট অফিসে টাকা জমাচ্ছেন! জিনিসপত্র ডেলিভারি হচ্ছে! জানতেন কি? পোস্ট অফিসকে হাত করে আড়ালে চলছিল গোপন কাজ? একাধিক ডাকঘর ঘিরে সন্দেহ! ডাকঘরগুলো বেসিক্যালি আতশকাঁচের তলায়?
সমরেশ বিশ্বাসের চক্রের হাত ধরে শেষ পাঁচ বছরে প্রায় তিন হাজার ভুয়ো ভারতীয় পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে। এই খবর সামনে আসতেই জোর শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশাসনিক মহলে। খুব স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ বাড়ছে আম নাগরিকদের মধ্যে। তার মধ্যেই আবার পোস্ট অফিসের সঙ্গে কানেকশনের বিষয়টা সামনে চলে এলো। জাল পাসপোর্টের হাত ধরে কারা ভারতে ঢুকে পড়ল, কী তাঁদের উদ্দেশ্য তা নিয়ে তৈরি হয়েছে চাপানউতোর।
যারা এই সমস্ত পাসপোর্ট ব্যবহার করেছেন তাঁরাই বা এখন কোথায় রয়েছেন, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। ডাক বিভাগের অফিসার, কর্মী, এমনকি পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের অফিসাররাও কলকাতা পুলিশের সিকিউরিটি কন্ট্রোল বিভাগের গোয়েন্দাদের নজরে। কারণ, ভুয়ো পাসপোর্ট-চক্রের সঙ্গে যোগসূত্র মিলেছে রাজ্যের বেশ কয়েকটা ডাকঘরের। মূলত এই ডাকঘরগুলো কলকাতার উপকণ্ঠে অবস্থিত।
কিন্তু কেন ডাকঘর এবং সেখানকার কর্মীদের একাংশের ভূমিকা নিয়েই বা কেন সন্দিহান তদন্তকারীরা? পুলিশের দাবি, ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, যে সব ডাকঘরে পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়। এই ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সমরেশ বিশ্বাস এবং তার ছেলে রিপন বিশ্বাস আগে থেকে আর এক অভিযুক্ত দীপঙ্কর দাসের মাধ্যমে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পাসপোর্টের জন্য ভুয়ো পরিচয়পত্র, অর্থাৎ আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, এমনকি জন্মের শংসাপত্র তৈরি করাতো।
এর পরে সেগুলো দিয়ে ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে আবেদন জমা দেওয়া হত। কিন্তু এখানে ডাকঘরের কর্মীরা কিভাবে দোষী? বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এক পুলিশ অফিসার জানান, সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্রগুলো এতটুকু যাচাই না করেই জমা নিয়ে নিত ডাকঘরের কর্মীরা। ফলে, কোনওরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জমা পড়ে যেত ভুয়ো নথি ও তথ্য। অলরেডি ডাকঘর কর্মীদের গ্রেফতার করাও শুরু হয়েছে।
ডাকঘর কর্মীদের উপর যে নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ উঠছে, সেক্ষেত্রে এটাও জানা দরকার যে, এক্সাক্টলি নিয়মটা কি? নিয়ম অনুযায়ী, ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে আবেদন জমা পড়ার পরে পুলিশি যাচাইয়ের সময়ে সেই আবেদন খতিয়ে দেখার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে বিনা বাধায় কোনওরকম যাচাই বা পরীক্ষা ছাড়াই আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতর ওই পাসপোর্ট দিয়ে দিত।
এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের জেরা করে পুলিশ নিশ্চিত, যে সব তথ্য তদন্তে উঠে এসেছে, সেগুলি হিমশৈলের চূড়া মাত্র। তদন্তকারীরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রে আবেদন জমা পড়ার পরে পুলিশি যাচাইয়ের সময়ে সেই আবেদন খতিয়ে দেখার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে বিনা বাধায় কোনও রকম যাচাই বা পরীক্ষা ছাড়াই আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতর ওই পাসপোর্ট দিয়ে দিত।
আপাতত এই ডাকঘর সূত্র ধরেই তদন্ত এগোচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের দাবি, পরিকল্পনা করেই বাংলাদেশি নাগরিকদের এনে ওই পাসপোর্ট বানিয়ে তাঁদের বিদেশে পাঠানো হত। বিনিময়ে ভুয়ো পাসপোর্ট-চক্রের সদস্যেরা আবেদনকারীদের থেকে কয়েক লক্ষ টাকা করে নিত। তবে, এখনও পর্যন্ত এভাবে কত পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে, তা জানা যায়নি।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ডাকঘরগুলোতে গত কয়েক বছরে জমা পড়া যাবতীয় আবেদনপত্র খতিয়ে দেখা হবে। একই সঙ্গে, ওই সব ডাকঘরের পাসপোর্ট সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে কত পাসপোর্ট তৈরি হয়েছে, তার তালিকাও চাওয়া হয়েছে আঞ্চলিক পাসপোর্ট দফতরের কাছে। সেগুলো হাতে এলেই পুরো ছবিটা পরিষ্কার হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন