সমকালীন প্রতিবেদন : জটিল অস্ত্রপচার বা কেমোথেরাপি আর নয়। এবার স্তন ক্যান্সার সারাবে একটা থকথকে জেলি। "হাইড্রোজেল"! নামটা শুনেছেন? দুই বাঙালি বিজ্ঞানীর কিস্তিমাত। সেরে উঠতে সময় লাগবে মাত্র কটা দিন। কিভাবে কাজ করবে এই জেলি? কোথায় পাবেন? দাম কত হবে? সবটা থাকবে এই প্রতিবেদনে।
সুখবর! টিউমারের ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হবে মাত্র ১৮ দিনে। স্তন ক্যানসারের চিকিৎসায় ‘সুপ্রামলিকিউলার হাইড্রোজেল থেরাপি’ নতুন দিশা দেখাচ্ছে। এই "হাইড্রোজেল" আসলে কি? আর পাঁচটা জেলের মতো এটা নয়। কোন দিক থেকে আলাদা, বলবো তার আগে জানাবো হাইড্রোজেল কেমন? এই হাইড্রোজেলের মধ্যে জলীয় ভাব বেশি। এর ভিতরে পলিমারের নেটওয়ার্ক আছে।
জেলের ভিতর ওষুধ ভরে দিলে ওই নেটওয়ার্কের জালিতে গিয়ে ওষুধটা সেঁটে যাবে। শক্ত করে আটকে বসবে, বাইরে বেরোবে না। এবার জেলিটা শরীরে ইনজেক্ট করলেই সেটা ওষুধকে নিয়ে সোজা চলে যাবে ক্যানসার কোষের কাছে। হাইড্রোজেলে ভরে ওষুধ তো ঢুকল শরীরে। এবার কোন ঠিকানায় সে থামবে, তারও পদ্ধতি আছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ক্যানসার কোষ একটি সঙ্কেত ছাড়ে, যেটি বুঝতে পারবে হাইড্রোজেল। সেখানে গিয়েই ফেটে যাবে। আর ওষুধ ছিটকে বার করে একেবারে টিউমারের উপর ফেলবে।
এবার বলবো হাইড্রোজেলের সঙ্গে সাধারণ জেলের তফাতটা কোথায়?
১/ সাধারণ জেল শরীরে ঢোকালে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা বাড়বে। হিতে বিপরীত হবে।
২) এমনিতে জেল বা জ্যামের মতো থকথকে বস্তু যদি সিরিঞ্জে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে সেটি এমন ভাবে জমে থাকবে যে, ইনজেক্ট করাই যাবে না।
৩) যদিও বা জেল ইনজেক্ট করা গেল, তা হলে সেটা শরীরে ঢুকেই রক্তে মিশে যাবে। ফলে ওষুধটা আর নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না।
এই হাইড্রোজেল এখানেই আলাদা। কারণ, এর চরিত্র বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে গবেষণাগারে। এটি যতক্ষণ বাইরে রাখা হবে, ততক্ষণ জেলির মতো জমে থাকবে। সিরিঞ্জে ভরার পরেই সেটি তরল হবে এবং সহজে ইনজেক্ট করা যাবে। আবার সুচের ডগা দিয়ে বেরোনো মাত্রই ফের জমে গিয়ে জেলি হয়ে যাবে। একই সঙ্গে তিন রকম সুবিধা পাওয়া যাবে।
অলরেডি এটা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা হয়েছে। গবেষণাগারে ইঁদুরগুলিকে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত করা হয়েছিল। তাদের উপরই ওষুধের একটামাত্র ডোজ ইনজেক্ট করে দেখা গিয়েছে, ১৮ দিনের মাথায় টিউমার কোষের ৭৫ শতাংশ নির্মূল হয়েছে। এর পরে মানুষের উপরেও পরীক্ষা হবে। তার জন্য নানা জায়গায় আবেদন করতে হয়। সে কাজ চলছে। যদিও তা সময়সাপেক্ষ, তবুও আশাবাদী গবেষকেরা।
আগামী দিনে ওষুধটি সাধারণের নাগালে এলে, তা কম খরচে বহু জনের প্রাণ বাঁচাতে পারে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন গবেষকেরা। এবার জানা দরকার, কোন গবেষকরা এই অসম্ভবকে সম্ভব করলেন? জেনে রাখুন, গবেষণা দু’টো ভাগে হচ্ছে। ‘হাইড্রোজেল’ তৈরি করা এবং তার কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণায় রয়েছেন আইআইটি গুয়াহাটির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক দেবপ্রতিম দাস ও তাঁরই দুই ছাত্রী তনুশ্রী দাস ও ঋত্বিকা কুশওয়াহা।
অন্য দিকে, ‘হাইড্রোজেল’ পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ করে কী রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে, তা নিয়ে পরীক্ষা করছেন কলকাতার বোস ইনস্টিটিউটের গবেষক কুলদীপ জানা ও তাঁর ছাত্র সত্যজিৎ হালদার এবং অনুপকুমার মিশ্র। এখন দেখার, কবে এই হাইড্রোজেল বাজারে আসবে। তার অপেক্ষাতেই মুখিয়ে সাধারণ মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন