সমকালীন প্রতিবেদন : রাজ্য জুড়ে স্যালাইন কাণ্ড ঘিরে হুলস্থুল কান্ড। "ব্ল্যাকলিস্টেড" সংস্থার স্যালাইন কার কথায় ঢুকলো মেডিক্যাল কলেজে? একগুচ্ছ ওষুধ ইনজেকশন আপাতত ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা। ঘটনায় দু দুটো জনস্বার্থ মামলা দায়েরের অনুমতি প্রধান বিচারপতি'র ডিভিশন বেঞ্চের। আগামী বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির সম্ভাবনা। বিতর্কের কেন্দ্রে রিঙ্গার্স ল্যাকটেট মানে আরএল স্যালাইন।
অভিযোগ, এই স্যালাইন আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু তার পরও কী ভাবে তা ব্যবহার করা হল প্রসূতিদের শরীরে? পরিবারের অভিযোগ, মেদিনীপুর মেডিক্যালে অসুস্থ সকল প্রসূতিকে সন্তান প্রসবের পর এই স্যালাইনটাই দেওয়া হয়েছিল। আর সেই কারণেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঘটনার সূত্রপাত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে। স্যালাইন দেওয়ার পর পাঁচ প্রসূতির মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তার সদ্যোজাত শিশুও অসুস্থ হয়ে বর্তমানে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এছাড়াও বাকি চার প্রসূতির মধ্যে তিনজনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার এসএসকেএমে আনা হয় তাদেরকে গ্রিন করিডর করে। এদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত। ফলে ডায়ালিসিসের প্রয়োজন। এরমধ্যেই, পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে বিতর্কের মাঝেই মেদিনীপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আরএল স্যালাইন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
শুধু এই স্যালাইন নয়, হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বুপিভ্যাকসিন, র্যানিটিডিন, অক্সিটোসিন, ফেনটানাইল সিট্রেট-সহ আটটি ওষুধ বা ইঞ্জেকশন আপাতত ব্যবহারে করা যাবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে বাইরে থেকে ওষুধ সহ অন্য ব্র্যান্ডের স্যালাইন কিনে নিয়ে আসতে হচ্ছে রোগীর আত্মীয়দের। বিকল্প ওষুধ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। কিন্তু, যে সংস্থার স্যালাইন ব্যবহারের পরপরই প্রসূতিদের অবস্থা শোচনীয়, সেটার আমদানি হলো কোথা থেকে? এই প্রশ্নই ঘুরছে সাধারণ মানুষের মনে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ অনলাইনে ওষুধের অর্ডার দেওয়ার সময়ে ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ ব্লক দেখে, তা আর বাইরে থেকে কেনা হয়নি। বরং সেটা পাশের পূর্ব মেদিনীপুরে তমলুক হাসপাতালের ভাঁড়ার থেকে আনা হয়েছিল। কিন্তু যে স্যালাইন সরিয়ে রাখার নির্দেশ, তা কার কথায় মেডিক্যাল কলেজে চলে এল? উত্তর অধরা।
অবশ্য অভিযোগ সামনে আসতেই ঘটনার তদন্তের জন্য ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু বিষয়টা এত সহজে মেটার নয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে মামলা দায়েরের অনুমতি চান আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি ও আইনজীবী কৌস্তব বাগচী।
আইনজীবী ফিরোজ এডুলজির আবেদন :
১) সিট গঠন করে তদন্ত হোক। ২) সিবিআই তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। ৩) ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট। ৪) অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সংক্রান্ত বিষয়ে নজরদারি করে রিপোর্ট এবং ৫) কি করে মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন ব্যবহার করা হল তার রিপোর্ট।
তদন্ত হচ্ছে, হবে। রিপোর্ট আসবে। আদালতে শুনানি হবে। কিন্তু মাঝখান থেকে চলে গেল মানুষের প্রাণ। তার কি হবে? এরপরেও কি বলা যাবে, সরকারি হাসপাতালে রোগী বা রোগীনীর জীবন সুরক্ষিত? স্যালাইন কান্ড কি সেটা বলার অবকাশ রাখলো?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন