সমকালীন প্রতিবেদন : আপনি যদি মনে করে থাকেন একদম ছোট থেকে একটা স্টার্ট আপ শুরু করবেন, তাহলে প্রতিবেদনটি আপনার জন্য। কোনো সিনেমা নয়। চরম বাস্তবতা। কয়েকশো কোটি টাকার মালকিন বিনীতা সিং! তিনি রাঁধেন এবং চুলও বাঁধেন! সকলেই জানেন কসমেটিক ব্র্যান্ড Sugar এর কথা! বিরাট ডিমান্ড! আজ ভারতবাসীর মুখে মুখে ফেরে 'সুগার'।
কিন্তু সেই সুগার এর মালকিন বিনীতা সিং এর লাইফস্টাইল বাকি পাঁচজনের থেকে কতটা আলাদা? সার্ক ট্যাঙ্কের দৌলতেও বছর ৩৭ এর যে বিনীতা এখন যথেষ্ট জনপ্রিয়, তাঁর শুরুটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না! নিতে হয়েছিল সাহসী সিদ্ধান্ত! বয়স যখন ১৭ বছর, তখনই তাঁর প্রফেসরের সঙ্গে কথাবার্তার সময় তাঁর ভবিষ্যৎ স্থির হয়ে গিয়েছিল। ওই প্রফেসরই বলেছিলেন বিনীতার উদ্যোক্তা হওয়া উচিত।
তারপর থেকেই কঠোর পরিশ্রম শুরু। মন দিয়ে পড়াশুনা করা। আইআইটি তে ভর্তি হওয়া, তারপর এমবিএ। বেশ কিছু চাকরির অফার পেয়েও বিনীতা সেগুলি নেন নি। সেই সময় অনেক মানুষ তার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁকে নানান প্রশ্ন করতে শুরু করে। বিনীতা সেইসব গায়ে মাখেননি। তারপর মুম্বইতে নতুন জার্নি। বিনীতা মুম্বইতে ওই সময় যে ছোট একটা বাড়িতে থাকতেন, তাতে সহজেই বৃষ্টির জল ঢুকে যেত।
এইসময় বাইরে বেরোনোর আগেও দশবার ভাবনা চিন্তা করতে হতো তাঁকে। কারণ, বাজেট ছিল খুবই অল্প। এমনকি একসময় নিজের দক্ষতা নিয়েও সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কারণ, তাঁর প্রথম উদ্যোগ ফ্লপ হয়েছিল। একবারের জন্যে হলেও নিজের মনে হয়েছিল, তবে কি চাকরি ছেড়ে ভুল করলেন তিনি? কিন্তু তারপরেও থেমে থাকেননি বিনীতা। বরং আরও গভীরভাবে ভাবতে শুরু করেন।
'ফ্যাবব্যাগ' নামে একটা বিউটি সাবস্ক্রিপশন কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই ভারতে প্রসাধনীর বাজারে ফাঁকা মার্কেট তাঁর চোখে ধরা পড়ে। তারপরেই জন্ম নেয় সুগার। তবে তখনও সবটা ঠিক হয়নি। নিজের সমস্ত টাকা সুগারে দিয়েও পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বিনীতাকে অনেক ধাক্কা খেতে হয়েছে। বিনীতা একবার নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে শেয়ার করেছিলেন যে, ইনভেস্টররাও কখনো কখনো তাঁর সাথে দেখা করতে চাইতেন না তিনি মহিলা বলে।
তবে এতো সবের মধ্যেও ব্যক্তিগত জীবনকে এফেক্টেড হতে দেননি বিনীতা। সন্তানদের জন্য সময় বের করতে ভোলেননি। নিজের যত্ন নেওয়া, অফিস সামলানো, আবার সন্তানদের সামলানো সব নিজের হাতে সামলেছেন তিনি। বিনীতা একবার বলেছিলেন, 'রাতে চলতো অফিস কল, সেই সময় বাচ্চারা ঘুমাতো। তাই তাঁকে সবসময় খেয়াল রাখতে হতো, বাচ্চারা যেন ঘুম থেকে না উঠে যায়।'
রাতের পর রাত জেগে কাটিয়েছেন বিনীতা। অবশেষে সেই সব দিনের মূল্য তিনি পাচ্ছেন। বর্তমানে তাঁর তৈরি সেই কোম্পানির বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসেব শুনলে চোখ কপালে উঠবে আপনার। ৫০০ কোটির বেশি টার্নওভার রয়েছে বিনীতার সুগার কসমেটিকসের। সেরা লিপস্টিক ব্র্যান্ড হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে সুগার।
বিনীতা প্রমাণ করে দিয়েছেন, তাঁর সেই কঠিন লড়াইয়ের সাফল্যই আজ তাঁকে ভারতবাসীর মনে জায়গা করে দিয়েছে। নারী শক্তিতে ফোকাস করেছেন বিনীতা। তাঁর টিমে এখন ৭৫ শতাংশই মহিলা কর্মী। যাদের নিয়ে তিনি লড়াই করছেন, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছেন। চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছে থাকলেই, উপায় হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন