সমকালীন প্রতিবেদন : একটি নয়, দু–দুটি জরায়ু এক প্রসুতির। শুনতে অবাক লাগলেও এটা বাস্তব। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা বিরল ঘটনা। আর এমনই একটি ঘটনার সাক্ষী থাকলেন বনগাঁর এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তবে ঘাবড়ে না গিয়ে সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে সুস্থ পুত্রসন্তান প্রসব করালেন ওই চিকিৎসক। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন ওই মহিলা। স্বস্তি ফিরল চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের।
সন্তানসম্ভবা অবস্থায় গত ১৯ ডিসেম্বর বনগাঁর গঙ্গা নার্সিং হোমে ভর্তি হয়েছিলেন পূজা বিশ্বাস নামে বনগাঁ থানার আঙ্গারপুকুরিয়া গ্রামের এক বধূ। গত বুধবার তাঁর অস্ত্রপচার করে সন্তান প্রসবেন দিন ঠিক হয়। অস্ত্রোপচার করে সন্তান প্রসব করানোর সময় অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত থাকা চিকিৎসক এবং নার্সরা তো অবাক।
কারণ তাঁরা দেখেন, ওই মহিলার পেটে একটি নয়, তার বদলে দু–দুটি জরায়ু। আর তারমধ্যে একটি জরায়ুতে সন্তান অবস্থান করছে। অপর জরায়ুটি মূত্রথলির আড়ালে ঢেকে ছিল। যা আল্ট্রাসোনোগ্রাফির সময় ধরা পড়ে নি। এই অবস্থায় অস্ত্রপচারের মাধ্যমে মা ও সন্তানকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরান চিকিৎসক।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়, শরীরের ভেতরে এই ধরনের দুটি জরায়ুর অবস্থানকে 'ইউটোরাইন ডাইডিলকাস ইউনিকলিস' বলা হয়ে থাকে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে যা বিরল ঘটনা হিসেবে বলা হয়ে থাকে। নিজের ২০ বছরের চিকিৎসক জীবনে প্রথম এমন ঘটনার সাক্ষি থাকলেন চিকিৎসক ডা: মহিতোষ মন্ডল।
তিনি জানালেন, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি রিপোর্টে এমন কোনও ঘটনার কথা উল্লেখ ছিল না। ফলে আর পাঁচজন প্রসুতির ক্ষেত্রে যে মানসিক প্রস্তুতির মাধ্যমে অস্ত্রপচার করা হয়, ওই বধূর ক্ষেত্রেও তেমনই ছিল। কিন্তু অস্ত্রপচার করার পর দুটি জরায়ু দেখে প্রাথমিকভাবে একটু অবাক হয়ে যাই। পরে অবশ্য সফল অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ওই বধূর সন্তান প্রসব করানো হয়।
নিজের পেটের ভেতরে যে দুটি জরায়ু অবস্থান করছে, তা কোনও টেরই পাননি প্রসুতি পূজা বিশ্বাস। তাই অপারেশন থিয়েটারে বিষয়টি জানার পর নিজেও আশ্চর্য হয়ে যান তিনি। সেইসময় তিনি চিকিৎসককে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে এতে কোনও সমস্যা হবে কিনা। তাতে চিকিৎসক তাঁকে জানিয়েছেন যে, না, এতে কোনও সমস্যা হবে না। পুত্রসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আপাতত নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন পূজা বিশ্বাস। স্বস্তি ফিরেছে রোগীর পরিজনদেরও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন