সমকালীন প্রতিবেদন : আরজি কর কাণ্ডের কেস ক্লোজ? হাইকোর্ট থেকে মামলা গিয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্য পুলিশ থেকে গিয়েছিল সিবিআইয়ে! সেই সিবিআই এর উপর থেকেই উঠল আস্থা! সুপ্রিম কোর্টের উপরেও অসন্তোষ! ফের ঘুরে, হাইকোর্টে আরজিকর কাণ্ডে নির্যাতিতার বাবা-মা! কি করবে হাইকোর্ট? কোন পথে হাঁটলো উচ্চ আদালত? এক্স্যাক্টলি কি চাইছে নির্যাতিতার পরিবার?
আরজিকর কাণ্ডে নির্যাতিতার পরিবারের এই মুহূর্তে সাফ কথা, বর্তমান তদন্তে তাঁদের কোনো আত্মা নেই। তাহলে করণীয় কি? বন্ধ হয়ে যাবে তদন্ত? না। নতুন করে মেয়ের খুনের তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা আরজি করে ধর্ষণ ও খুন হওয়া চিকিৎসকের বাবা মার। একটাই দাবি, তদন্তের নামে সব তথ্য-প্রমাণ লোপাট হয়ে গিয়েছে তাই নতুন করে মেয়ের খুনের তদন্ত চান।
আর আদালত দ্রুত সেই তদন্ত নতুন করে শুরু করার নির্দেশ দিক। কারণ, অলরেডি ট্রায়াল শুরু হয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এই অবস্থায় এখনই আদালত হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি আরও হাতের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তাঁরা। এরপরই মামলার অনুমতি বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের। মামলায় সিবিআইকে যুক্ত করার নির্দেশ দিল আদালত।
অথচ একটা সময় কলকাতা পুলিশের উপর থেকে ভরসা উঠে গিয়েছিল নির্যাতিতার পরিবারের। ভরসা রেখেছিলেন সিবিআইয়ে। তারপর একে একে সিবিআই, সুপ্রিম কোর্ট এমন কি বিশিষ্ট বর্ষীয়ান আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভারের উপর থেকেও আস্থা উঠেছে নির্যাতিতার পরিবারের। একাধিক শুনানির পরেও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি আরজি কর মামলার। আরজি করের ডাক্তারি ছাত্রীকে খুন ও ধর্ষণ মামলায় গত শুক্রবারই জামিন পেয়েছেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে আগেই তুমুল ক্ষোভপ্রকাশ করেন আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা। যখন সন্দীপদের জামিনের কথাটা শোনেন, তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। তারপর বলেছিলেন, "আশা হারালে তো চলবে না। বিচার ছিনিয়ে আনতেই হবে।" সেই বিচার ছিনিয়ে আনতেই কি তবে হাইকোর্টে নির্যাতিতার বাবা-মা? যদিও, কোনোভাবেই বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ৷
আগামী ২৪ ডিসেম্বর সিবিআইকে তদন্ত নিয়ে রিপোর্ট পেশ করতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে৷ একইসঙ্গে এটাও স্পষ্ট করেছেন, "ট্রায়াল কোনোভাবেই বন্ধ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্ট এই তদন্তে নজরদারি করছে৷ কিন্তু, পরিবারের যদি সেই তদন্ত নিয়ে কোনও আপত্তি থাকে, সে ব্যাপারে হাইকোর্ট নজরদারি করবে৷ তাতে কোনও বাধা নেই৷ আগামীদিনে ১৪ দিন পরপর তদন্তে অগ্রগতির রিপোর্ট নেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে ২৪ ডিসেম্বর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে হাইকোর্ট", এটাও অ্যাসিওর করা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল সিবিআই এর উপর থেকে আস্থা উঠল কেন নির্যাতিতার পরিবারের? একটু পিছিয়ে গিয়ে দেখি? নির্যাতিতার বাবা-মা সেদিন সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেছিলেন, সিবিআই তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে না। আর এবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, সিবিআই তাঁর বয়ানই নেয়নি৷ বাড়িতে গিয়ে কথা বলেছে৷ কিন্তু, বয়ান নেয়নি৷ তবু আপাতত সিবিআইয়েই ভরসা রাখতে হবে৷ কারণ, হাইকোর্ট বলেছে, তারা নজরদারি চালাবে৷ এখন এর বেশি কিছু বলতে পারব না৷"
ফলে দেখার, আপাতত আরজিকর কাণ্ডে তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয়? সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা কথা বলার অভিযোগের পর সরাসরি তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থার বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ আনা, এসব তো চাট্টিখানি কথা নয়। তাই এখন দেখার, এতো জলঘোলার পর আদৌ কি নির্যাতিতার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের ন্যায় বিচার হয়? উত্তর দেবে সময়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন