সমকালীন প্রতিবেদন : আরজি কর কাণ্ডে নির্দিষ্ট সময়ে চার্জশিট জমা দিতে পারল না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। আর সেই কারণে শুক্রবার আরজি কর কাণ্ডে জামিন পেয়ে গেলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার ওসি অভিজিৎ মন্ডল। শুক্রবার শিয়ালদা আদালত সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডলকে জামিন দেয়। ২ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দেওয়া হয় তাঁদের।
গত ৮ আগস্ট রাতের শিফটে ডিউটি ছিল তরুণী চিকিৎসকের। পরদিন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। এই ঘটনায় প্রথমে কলকাতা পুলিশ তদন্তে নামে। গ্রেপ্তার করা হয় সঞ্জয় রায় নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে। এর পর ধর্ষণ এবং খুনের এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের ভার নেয় সিবিআই।
তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর সন্দীপ ঘোষকে একাধিকবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকেরা। অবশেষে আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে নেমে সন্দীপকে গ্রেফতার করে সিবিআই। তারপর ১৫ সেপ্টেম্বর তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার দেখায় সিবিআই। একইসঙ্গে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে।
গত ৯ ডিসেম্বর নির্দেশ মেনেই আদালতে হাজির হয়েছিলেন সন্দীপ ও অভিজিৎ। আদালতে সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী দাবি করেছিলেন গ্রেফতারের পর ৮৬ দিন কেটে গেছে। এখনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে কোনও শক্তপোক্ত প্রমান পেশ করা হয়নি। সেই কারণে তাঁকে জামিন দেওয়া হোক। কিন্তু ওই দিন আদালত নির্দেশ দেয়, ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতেই থাকতে হবে তাঁদের।
অন্যদিকে, অভিজিৎ মণ্ডলের আইনজীবী তখন বলেন, তদন্তকারীরা তাঁর মক্কেলকে প্রমান লোপাটের কারণে গ্রেফতার করলেও সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির রিপোর্ট হাতে এলেও তা আদালতে পেশ করা হয়নি। যদিও সিবিআই সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে আদালতকে স্পষ্ট সেদিন জানায়, তদন্তের স্বার্থে ৯০০ ঘণ্টার ভিডিও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
আজ, শুক্রবার ফের সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মন্ডলকে শিয়ালদা আদালতে তোলা হয়। এদিন ফের সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে গড়িমসির কথা উল্লেখ করে মক্কেলদের জামিনের আবেদন করেন দুই অভিযুক্তর আইনজীবীরা। গ্রেফতারের ৯০ দিন পরেও দু'জনের বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। তাই অবশেষে ২০০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিল মঞ্জুর করল শিয়ালদা আদালত।
তথ্য প্রমাণ লোপাটের মামলায় জামিন পেলেও এখনই জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না সন্দীপ ঘোষ। আর্থিক দুর্নীতি মামলায় আপাতত জেলেই থাকতে হচ্ছে সন্দীপ ঘোষকে। কেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিবিআই সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিতে পারল না? এই পরিস্থিতিতে আরজি কর মামলায় সিবিআই এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, কোন তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে সিবিআই এই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল? এর দায় কে নেবে?
এদিনের ঘটনায় রীতিমতো হতাশ নিহত তরুণী চিকিৎসকে বাবা–মা। এদিনের রায় শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা। হতাশ আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকেরাও। তবে তাঁরাও জানিয়েছেন, ন্যায় বিচারের আশায় তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এদিনের ঘটনায় ফের সিপিএমের পক্ষ থেকে তৃণমূল এবং বিজেপির সেটিং এর অভিযোগ তোলা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন