Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

‌'এক দেশ, এক নির্বাচন' এর সুবিধা-অসুবিধা কি?

One-country-one-election

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌'এক দেশ, এক নির্বাচন' এর সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে জানেন আপনি? অলরেডি সিলমোহর দিয়ে দিয়েছে মোদীর মন্ত্রীসভা। নতুন বিল কনফার্ম? কেন একসঙ্গে গোটা দেশের নির্বাচন চাইছেন মোদী? এক্সট্রা বেনিফিট? বিরোধীরাই বা কেন এর বিপক্ষে, এক্স্যাক্টলি সমস্যা কোথায়?

আসলে এক দেশ এক নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্ন। বারবার এই প্রস্তাবের পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ সুবিধা তো একটা নয়, একাধিক। প্রথমত, এই যে বারবার নির্বাচন হলে যে বিপুল খরচ, তাতে রাশ টানা যাবে। ভোটের পিছনে যেমন সরকারের খরচ কমবে, তেমন রাজনৈতিক দলগুলিরও খরচ কমবে।

দ্বিতীয়ত, একসঙ্গে বিধানসভা এবং লোকসভার ভোট হলে ভোটের হার বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে। এটা কিন্তু মোদির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলিরও সারাবছর ভোটপ্রচারের ঝক্কি থাকবে না। ফলে মানুষের কাজে অনেক বেশি মনোনিবেশ করা যাবে। চতুর্থ পয়েন্ট, বারবার নির্বাচনের জন্য সরকারি কাজকর্ম, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে থমকে যায়। একসঙ্গে ভোট হলে বারবার কাজ থমকে যাওয়া কমে যাবে। এটাও ফ্যাক্টর। 

তাছাড়া, বারবার নির্বাচনের ফলে বারবার পরিশ্রম করতে হয়, ঝক্কি পোহাতে হয় ভোটকর্মী এবং নিরাপত্তারক্ষীদের। সেটাও খানিকটা কমানো যাবে। অতএব, সব দিক ভাবনা চিন্তা করেই মোদী "এক দেশ, এক নির্বাচন" এর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে রীতিমতো উঠে পড়ে লেগেছেন। কিন্তু এর সঙ্গে রয়েছে একগুচ্ছ সমস্যাও। সেগুলোর কথাও তো ভাবতে হবে। যেমন, সংবিধানে বহু সংশোধনী আনতে হবে। যে প্রক্রিয়াটা কিন্তু বেশ জটিল।

নেক্সট এবং খুব ইম্পরট্যান্ট একটা পয়েন্ট, যে কারণে বিরোধীরা এই 'এক দেশ, এক নির্বাচন' এর বিরোধিতা করছে। দেখুন, দেশের একেক রাজ্যে বিধানসভার মেয়াদ শেষ হয় একেক সময়। একসঙ্গে ভোট করাতে হলে কোনও কোনও রাজ্যের ভোট এগিয়ে আনতে হবে। কোনও কোনও রাজ্যের ভোট পিছিয়ে দিতে হবে। যা পদ্ধতিগতভাবে চরম সমস্যার। সঙ্গে এটাও তো বুঝতে হবে, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোট চরিত্রগতভাবে আলাদা। 

রাজ্য এবং কেন্দ্রের ভোট একসঙ্গে হলে বিধানসভা ভোটের চরিত্র নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা বিরোধীদের। না শুধু এটুকুই নয়, 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার ঘুরপথে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো একটি ব্যবস্থা চালু করতে চাইছে বলে মনে করছে বিরোধী নেতৃত্ব। আর ঠিক এই কারণেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বিলে অনুমোদনের পর আবারও এর বিরোধিতায় সরব তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী। পাশাপাশি, কোনও রাজ্যে বা কেন্দ্রে মেয়াদের মাঝপথে সরকার পড়ে গেলে ফের সেই রাজ্যে বা কেন্দ্রে নির্বাচন করানোর প্রয়োজন পড়বে। ফলে সেক্ষেত্রে কিন্তু এক দেশ-এক নির্বাচনের মূল উদ্দেশ্য সফল হবে না। 

আরেকটা বিষয়, সংবাদসংস্থার খবর অনুযায়ী দেশের লোকসভা ও সব রাজ্যে বিধানসভা ভোট একসঙ্গে হলে প্রতি ১৫ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে শুধুমাত্র ইভিএম মেশিনের জন্য। যা বর্তমান খরচের চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, একসঙ্গে ভোট হলে প্রতি বুথে দুটি ইভিএম দরকার। একটা লোকসভার, অন্যটা বিধানসভার জন্য। কিন্তু এখন যেহেতু বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচন আলাদাভাবে হয়, তাই একটা কেন্দ্রে একটা ইভিএমেই কাজ চলে। এবার 'এক দেশ, এক নির্বাচন' কার্যকরী হলে, সেটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে দ্বিগুণ হয়ে যাবে ভিভিপ্যাটের খরচও। একটা ইভিএমের মেয়াদ সর্বোচ্চ ১৫ বছর। ফলে ১৫ বছর পর পর ইভিএমের পিছনে ওই বিপুল খরচ করতে হবে। সঙ্গে, একসঙ্গে ভোট করাতে হলে ভোটকর্মী এবং নিরাপত্তাকর্মীদের উপর অতিরিক্ত চাপের ব্যাপারটা তো রয়েইছে। 

রাজনীতির কারবারিদের একাংশের প্রশ্ন, 'এক দেশ, এক নির্বাচন' অ্যাপ্লিকেবল হলেই দেশের উন্নয়ন যে বুস্টিং হবে তেমন কোনো গ্যারান্টি আছে কি? বিরোধী নেতৃত্ব থেকে বিশেষজ্ঞরা কিন্তু ইতিমধ্যেই এই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। কিন্তু যথারীতি অন্যান্য বিষয়ের মতোই এক্ষেত্রেও এসবকে তোয়াক্কা করছে না কেন্দ্র, দিচ্ছে না গুরুত্ব, অভিযোগ মমতার। তৃণমূলের সাংসদেরা সংসদে এই বিলের বিরোধিতা করবেন বলে জানা গেছে। যদিও এখনো পর্যন্ত যতটা জানা যাচ্ছে, কেন্দ্র এই নিয়ে কোন মতপার্থক্য চাইছে না। ফলে, এই বিল নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চর্চা হতে পারে, তা আঁচ করেই আগাম পরিকল্পনাও সেরে নিয়েছে কেন্দ্র। তাই এই ইস্যুতে আলোচনার পথ খোলা রাখতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। সে ক্ষেত্রে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বিলটি খতিয়ে দেখতে যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর কথাও ভাবছে তারা। সেখানে আলোচনার মাধ্যমে একটা ঐকমত্য তৈরির চেষ্টা করতে পারে কেন্দ্র। এখন দেখার, সেই আলোচনায় বিরোধীদের আশঙ্কার বিষয়টা প্রাধান্য পায় কিনা।‌






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন