সমকালীন প্রতিবেদন : মঙ্গলবারও জামিন পেলেন না বাংলাদেশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। উল্টে আরও একমাস চট্টগ্রামের জেলেই বন্দি থাকতে হবে তাঁকে। ফলে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের ভবিষ্যৎ কোন দিকে এগোচ্ছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতিও কি হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষ এমনকি অন্যান্য দেশগুলিও।
মঙ্গলবার বাংলাদেশের চট্টগ্রাম আদালতে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের হয়ে মামলা লড়ার জন্য রাজিই ছিলেন না কোনও আইনজীবী। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত এই মামলার শুনানি স্থগিত রাখলো চট্টগ্রাম আদালত। আসলে এর পুরোটাই ফুল প্রুফ প্ল্যানিং। ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, চিন্ময়কৃষ্ণের আইনজীবীর উপর হামলা হয়েছে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। ভর্তি আইসিইউতে। হামলা চালানো হয়েছে তাঁর বাড়িতেও। জানিয়েছে ইসকন।
এছাড়াও, একাধিক আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের জামিন পাওয়া যে খুব একটা সোজা বিষয় হবে না বাংলাদেশের বুকে, সেটা নতুন করে বলার দরকার পড়ে না, এমনই মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। এরকম একটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে একদিকে যেমন চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে আগামী দিনে কি ঘটতে চলেছে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তেমনই, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবি সহ সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে মঙ্গলবারের পর বাংলাদেশে কি ঘটবে, সেটাও একটা বড় প্রশ্ন?
এমনিতেই চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে, ভারত সরকারের কী ভূমিকা? বাংলাদেশের হিন্দু নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। বাংলাদেশকে বার্তা দিয়েছে, যাতে সে দেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। কিন্তু কোথায় কী? পরিস্থিতি কোনোভাবেই বদলাচ্ছে না।
মৌলবাদের নাগপাশে আটকে বাংলাদেশ। নানা ঘটনায় দু'দেশের সীমান্ত এলাকায় বাড়ছে উত্তাপ। জেলবন্দি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের দ্রুত মুক্তি ও হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বন্ধের দাবি জানিয়ে সোমবার পেট্রাপোল সীমান্তে চলেছে প্রতিবাদ কর্মসূচি। যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
জিরো পয়েন্টে জমায়েত, মানুষের বিক্ষোভ। বাংলাদেশে শুভেন্দুর রফতানির বন্ধের হুঙ্কার। এইসব কিছু কি তাহলে ফিকে পড়ে গেল? হিসেব কিন্তু ঘুরে যেতে পারে। শুভেন্দুর হুঙ্কার সত্যি হয়ে গেলে, বাংলাদেশের বিপদ বাড়তে পারে। ভারত থেকে কম জিনিস তো রপ্তানি হয় না বাংলাদেশে। ইউনুস সরকারের চোখের সামনে, নাকের ডগায় যা যা ঘটছে, সেসবের পর ভারতের একটা স্টেপ গোটা বাংলাদেশের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারে কিন্তু। বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, আদৌ কি এ বিষয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো ভাবনা রয়েছে?
সোমবার পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে শুভেন্দুর হুঙ্কার সত্যি হয়ে গেলে ভুগতে বাধ্য বাংলাদেশ। ভারত সরকার এখনো চুপ করে পুরোটা দেখছে। মোদি সরকারের হাতে এত কিছু থাকার পরেও কোনো প্ল্যানিং নেই, এটা হতে পারে না, বলছেন বিশ্লেষকদের একাংশ। সেই প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে, শুভেন্দুর স্ট্র্যাটেজি মতই ভারত সরকার পদক্ষেপ করলে, কী করবে বাংলাদেশ?
আর একটা বিষয়ও কিন্তু এর মাঝে থেকে যাচ্ছে। ভারতের একটা স্টেপ চিন্ময়কৃষ্ণ দাস সহ বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের কোনওভাবে চাপে ফেলবে না তো? তাহলে কি এই ভাবনা থেকেই এখনো পর্যন্ত মোদি সরকার কোনোরকম পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত প্রকাশে আনছে না? অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। প্রশ্ন অনেক। আগামী দিনে ভারত–বাংলাদেশের সম্পর্ক কোন পথে? আদৌ সেই দুই বন্ধু দেশের পুরনো সমীকরণ ফিরবে তো? উত্তর আপাতত জানা নেই কোনও পক্ষেরই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন