সমকালীন প্রতিবেদন : জলের মধ্যে থেকে হঠাৎ ভেসে ওঠে ভারতের এই বিশালাকার শিবমন্দির। গায়ে কাঁটা দেয় এই দৃশ্য। জানেন, রোজ সকাল সন্ধ্যায় কি ঘটে এখানে? আরব সাগরের মাঝে অলৌকিকতা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে এই মন্দিরকে। ভেতরে রয়েছে স্তম্ভেশ্বর মহাদেব। লোকে বলেন স্তম্ভেশ্বর মহাদেবের মন্দির! মন্দিরটা প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো!
আর এই মন্দিরই ২৪ ঘন্টায় দুবার অদ্ভুতভাবে জলের নীচে ডুবে যায় এবং ফের মাথা চাড়া দিয়ে জেগে ওঠে। কিন্তু মন্দিরটা অদৃশ্য হয়ে যায় কেন? কিভাবে? জানার কৌতূহল বাড়ছে তো? পঞ্চভুজাকৃতির এই মন্দির একটা সেতু দিয়ে উপকূলের সঙ্গে যুক্ত। ওই পথেই সকাল সকাল ভক্তরা মন্দিরে পৌঁছে যান, নিষ্ঠা আর রীতি মেনে পুজো দেন।
মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে শোনা যায় ঢেউয়ের শব্দ। কিন্তু আসল কাজটা হয় পুজোর পর। পুজোর পরেই শুরু হয় অপেক্ষা। জোয়ারের সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে ফাঁকা হতে শুরু করে মন্দির। সে এক অদ্ভুত কান্ড! সকলেই একটা নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। আর চোখের সামনে একটু একটু করে আরব সাগরের জলে বিলীন হয়ে যায় মন্দিরটি।
৪ ফুট উচ্চতার শিবলিঙ্গ সহ সমুদ্র গর্ভে একটা গোটা মন্দির মিলিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা তো নয়। তখন চোখের সামনে শুধুই জলরাশি। মন্দিরের চিহ্নমাত্র নেই! বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই কেটে যায়! তারপর আবার সেই অদ্ভুত দৃশ্য! চোখের সামনে মন্দিরকে জেগে উঠতে দেখা যায়! সরে যেতে শুরু করে জোয়ারের জল। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে স্তম্ভেশ্বর মন্দির।
মোদ্দা কথা, প্রতিদিন জোয়ারের জলে ডুবে যায় এই মন্দির। আবার ভাটার সময় জেগে ওঠে। বলা হয় প্রকৃতি নিজের হাতে মহাদেবের জলাভিষেক করান। স্রষ্টার কী অপরূপ লীলা! সাধেই কী ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসেন? না। বহুদূর পাড়ি দিতে হবে এমনটাও নয়। হাত বাড়ালেই গুজরাট! গুজরাটের কাভির কামবোই শহরে রোজ দুবেলা ঘটে এই আজব ঘটনা
অনেকের মনেই কৌতুহল, সমুদ্রের মাঝে কে নির্মাণ করেছিলেন এই মন্দির? সে নানা মুনির নানা মত। কথিত আছে, শক্তিশালী তারকাসুর। ভগবান শিব তাঁকে বধ করার জন্য দেব সেনাপতি কার্তিকেয়-কে সৃষ্টি করেন। তারাকাসুর অসুরকে বধ করার পরে নিজে অপরাধবোধে ভুগতে শুরু করেন। ভগবান বিষ্ণু তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, অত্যাচারী অসুরকে হত্যা করা ভুল নয়।
কিন্তু তারকাসুর শিবের ভক্ত, তাই তাঁর হত্যার পাপমোচন করতে গেলে একটা শিব লিঙ্গ স্থাপন করলেই হবে। এমনই পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর আরবসাগর ও ক্যাম্বি উপসাগরের মাঝে উপাসনায় রত হন কার্তিকেয়। সেখানেই পরবর্তীকালে নির্মিত হয় স্তম্ভেশ্বর মন্দির। যা আজ অত্যন্ত জাগ্রত। তবে শিব ভক্তরা ছুটে যাওয়ার আগে একটা জিনিস জেনে নিন।
যেহেতু প্রতিদিন দিনে দুবার স্তম্ভেশ্বরের মন্দির জলে ডুবে যায়, তাই সেই অসাধারণ দৃশ্য দর্শনের জন্য স্থানীয় জোয়ার ভাটার সময় জেনে তবেই সেখানে যাওয়া উচিত। মন্দির সংলগ্ন এলাকায় হোটেল, রেস্তোরাঁ রয়েছে। তাই পর্যটকরা সময়ের হিসেব করেই মন্দির দর্শনে যান। মন্দিরের নির্দিষ্ট আশ্রমও রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন