Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

'সৎ' বিশেষণটাই কি 'পাক্কা রাজনীতিবিদ'‌ করতে পারেনি মনমোহন সিংকে?

 

Manmohan-Singh

সমকালীন প্রতিবেদন : প্রচারের আলোর বাইরে থেকেও অ্যাচিভমেন্ট কম ছিল না মনমোহন সিংয়ের। তবে কি জানেন? মনমোহন সিং সম্পর্কে সবচেয়ে বড় 'মিথ' ছিল যে 'তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন না।' অ্যাকাডেমিয়া থেকে আমলাতন্ত্রের উঁচু লেভেলে প্রবেশ করেছিলেন বটে। বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রকের মতো মন্ত্রক, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং যোজনা কমিশনের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান, ইন্দিরা গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধী, চন্দ্রশেখর থেকে পিভি নরসিমা রাও‌– একাধিক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর ঝুলিতে। 

এছাড়াও, তিনি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণের জগতে বিচরণ করেছিলেন দীর্ঘ সময় ধরে। তারপরেও এই কথাটা আজও উঠছে, "উনি রাজনীতির লোক নন"! কিন্তু তার সাথে গোটা ভারতবর্ষের মানুষ মনমোহন সিংয়ের প্রশংসায় আজও পঞ্চমুখ। সবার মুখে মুখে ফিরছে আজ একটাই কথা, কাজ করার জন্য বেশি কথা বলার প্রয়োজন হয় না। নীরব থেকেই একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়েছেন। বিরোধীদের "মৌনমোহন" কটাক্ষ গায়ে মাখেননি! 

আসলে কি জানেন? ওই যে একাধিক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা, তাঁর সেই অভিজ্ঞতার ফলে আমলা থেকে মন্ত্রী হয়ে উঠেছিলেন মনমোহন। আর এরপর দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ১০ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যদিও তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের 'ক্ষমতার আসল কেন্দ্রবিন্দু' ছিল অন্যত্র। 

এই দীর্ঘ পথ অবশ্য তিনি অতিক্রম করতে পেরেছিলেন নিজের রাজনৈতিক বোধবুদ্ধির ফলেই। তাঁর মধ্যে থাকা রাজনীতিবিদই মনমোহনকে সবার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। স্বাধীন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর এই শান্ত, নম্র স্বভাব এবং রাজনৈতিক বুদ্ধিই কাজে লেগেছিল। 

জীবনে একবারমাত্র লোকসভা ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন মনমোহন সিং। তাতে তিনি হেরেছিলেন। তবে সংস্কারক হিসেবে নিজের দর বুঝিয়েছিলেন মনমোহন। তাই নির্বাচনী রাজনীতির অংশ না হয়েও সংসদে তিনি থেকেছেন। এদিকে 'জননেতা' হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তবে এর জন্যেই হয়ত মনমোহন সিংকেই ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সোনিয়া গান্ধী।  

১৯৯১ সালে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্যে সব কিছু 'বাজি রেখেছিলেন' মনমোহন সিং। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পারমাণবিক চুক্তির জন্যে তিনি সেই একই কাজ করেছিলেন। কারণ, তিনি এটাকে কেবলমাত্র একটা চুক্তি হিসেবে দেখেননি, বরং পশ্চিমি বিশ্বের সঙ্গে ভারতের 'রিসেট বোতাম' হিসেবে দেখেছিলেন। সেই সময় বামেরা তাঁর সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলেও মনমোহন অনড় থেকেছেন নিজের অবস্থানে। বরং তিনি তখন রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন। সমাজবাদী পার্টি, তৃণমূলের সঙ্গে চ্যানেল খুলেছিলেন। 

১৯৯১ সালের পর কংগ্রেসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচনী ফল হয়েছিল ২০০৯ সালে। আর তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মনমোহন। তবে নিজের দ্বিতীয় টার্মে তিনি পদে থাকলেও ক্ষমতা যেন তাঁর হাতে ছিল না। তারপরেও তিনি গদিতে বসেছিলেন। রাজনীতির কচকচানি সহ্য করেও জোট টিকিয়ে রেখেছিলেন তিনি। তবে রাজনীতির স্বার্থেই দুর্নীতির অভিযোগ সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর ক্যাবিনেটে পাশ হওয়া অর্ডিনেন্স ছিঁড়েছিলেন রাহুল গান্ধী। সেটাই যেন ছিল তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের অন্তের সূচনা। 

রাজ্যনৈতিক জীবনে ‘মিস্টার ক্লিন’ হিসাবে পরিচিত মনমোহনকে সম্ভবত পাক্কা রাজনীতিবিদ করতে পারেনি এই 'মিস্টার ক্লিন' বা 'সৎ' বিশেষণটাই। এটা ফ্যাক্ট, অনাড়ম্বর মৃদুভাষী রাজনীতির উচ্চকিত ঢক্কানিনাদে সত্যিই বেমানান ছিলেন মনমোহন। রাজনীতিতে এক বিরল ঐতিহ্যকে সঙ্গে নিয়েই চলে গেলেন তিনি।‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন