সমকালীন প্রতিবেদন : হাত বাড়ালেই পূণ্য! দীঘার সমুদ্রতীরে একটু একটু করে বেড়ে উঠছে জগন্নাথ ধাম! জড়িয়ে একের পর এক চমক। বেলে পাথর থেকে সোনার ঝাড়ু, পুরীকেও হার মানাবে নাকি দীঘা? প্রসাদটাও কি স্পেশাল? অলরেডি ফার্স্ট লুক নিয়ে শুরু হইচই। মন্দির উদ্বোধন নিয়ে বড়সড় সারপ্রাইজটা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সঙ্গে দীঘার জগন্নাথ ধামের বিরাট মিল। এক ঝলক দেখলে চেনা মুশকিল কোনটা পুরী, কোনটা দীঘা। সেই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলেই তৈরি। উচ্চতাও পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতোই। পুরীর মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা রীতিরও কিছু মিল থাকতে পারে। এমনকি পুরীর মন্দিরের মতোই দীঘার জগন্নাথ ধামেও ধ্বজা পরিবর্তন করা হবে। তবে সেটা কিছুটা অন্য পদ্ধতিতে।
এখানেও চৈতন্য মহাপ্রভুকে উৎসর্গ করে একটি দ্বারের নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নাম "চৈতন্য দ্বার"। পুরীর মত "স্বর্গ দ্বার" ও থাকবে দীঘার জগন্নাথ ধামে। তবে দীঘাতে যে মূর্তি প্রতিষ্ঠা হবে তা রাজস্থানের তৈরি। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী এই ছবি পছন্দ করেছিলেন। তারপর তা রাজস্থানে পাঠানো হয়, সেখান থেকেই এসেছে মূর্তি।
কিন্তু পুরীতে যেমন জগন্নাথ দেব দেখা যায়, অনেকটা তেমনই হবে এখানকার মূর্তিও। এখানেও থাকবে ভোগ তৈরির ঘর। অলরেডি জগন্নাথ ধামের ফার্স্ট লুক প্রকাশ্যে এসেছে, যা ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল হইচই। যা পর্যটকদের মধ্যেও বাড়তি উৎসাহের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু যে জগন্নাথ ধাম ঘিরে এত আলোচনা তার উদ্বোধন হবে কবে?
মন্দিরের কাজ শেষের পথে। তিনদিনের দীঘা সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। বুধবার দীঘায় জগন্নাথ মন্দির পরিদর্শনে যান তিনি। সেখানে তিনি বলেন, "সমুদ্রসৈকতে একটি জগন্নাথ মন্দির তৈরি করব বলে ঠিক করেছিলাম। আমার সঙ্গে সরকারি আধিকারিকরা ছিলেন। তিন বছর পর সেই কাজ শেষ হল।"
হ্যাঁ, আগামী তিন মাসের মধ্যে বাকি কাজ শেষ হয়ে যাবে। আগামী অক্ষয় তৃতীয়ায় মন্দিরের উদ্বোধন হবে। আগামী বছর হবে রথযাত্রাও। 'রীতি' ভেঙে এবার রথযাত্রায় দীঘার মন্দিরে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। উলটো রথে ইসকনের রথে যাবেন তিনি। ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্টও আসবেন দিঘার মন্দিরে। পুজোর ৪৮ ঘণ্টা আগে দিঘায় পৌঁছে যাবেন তাঁরা।
না শুধু যাবেন, থাকবেন, তেমনটা নয়। সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, "রথযাত্রার সোনার ঝাড়ুও বানিয়ে দেবেন।" এই উদ্দেশ্যে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে অনুদান দেবেন পাঁচ লক্ষ টাকা। তবে বানিয়ে দেবে ইসকন। কি কি থাকবে মন্দির জুড়ে? কি দিয়ে দেওয়া হবে জগন্নাথধামে জগন্নাথ দেবের পুজো?
জানা যাচ্ছে, পুজো দেওয়ার সামগ্রী বিক্রির আলাদা জায়গা থাকবে। সেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবস্থাও করা হবে। দোকান করবেন সনাতন ধর্মের লোকেরাও। পুরীর খাজার মতো দীঘায় মিলবে বাংলার ক্ষীরের গজা, প্যাড়া, গুজিয়া। এগুলোর জন্য আলাদা আলাদা ঘর তৈরি করা হবে।
এছাড়াও আলাদাভাবে ভোগঘর, স্টোর রুম, গেস্ট রুম, বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা থাকবে। পাশাপাশি, দীঘায় জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ির কাছে একটা ঘাট তৈরি করে দেবে হিডকো। জেলা পরিষদের বাড়ি অধিগ্রহণ করে তৈরি হবে পুলিশ পোস্ট। রাজ্য-দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গোটা বিশ্বের মানুষকে দীঘার মন্দিরে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলাই বাহুল্য, এবার যারা শুধু সমুদ্রের টানে দিঘাতে যেতেন, তাঁদের কাছে বাড়তি পাওনা হুবহু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি সমুদ্র তীরে গড়ে ওঠা এই জগন্নাথ ধাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন