সমকালীন প্রতিবেদন : রেল'কে বেচে দিচ্ছে মোদী সরকার? জানেন প্রবীণ নাগরিক, সাংবাদিক সহ অন্যান্য সুবিধাভোগীদের সব ছাড় তুলে দেওয়ার আসল কারণটা কি? "দান খয়রাতি"র দিন শেষ! এবার রেল সরকারি থেকে ডিরেক্ট বেসরকারি? আসল ফ্যাক্ট জানলে মাথা ঘুরে যাবে। এই যে সংসদের চলতি অধিবেশনে রেলওয়ে সংশোধনী বিল পেশ করা হয়েছে। তৃণমূল সহ প্রায় সবকটা বিরোধী দলই এই বিলের বিরোধিতা করেছে।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, বেসিক্যালি রেল এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে বসেছে। তাহলে এই ধারণাটাই কি ঠিক? বিরোধীদলের সাংসদরা কিন্তু একটা কথা বারবার বলছেন যে, রেলটাকে বেচে দিতেই মোদি সরকার সব ধরনের ছাড় তুলে দেওয়ার পক্ষে। একটু ভেবে দেখতে গেলে, করোনা অতিমারির দোহাই দিয়ে প্রবীণ নাগরিক, সাংবাদিক সহ অন্য সুবিধাভোগীদের যে ছাড় তুলে দেওয়া হয়েছিল, সেই অতিমারি কাল পেরোলেও রেল কিন্তু আর সেই ছাড়ের পথে হাঁটেনি।
আবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের ইঙ্গিতেই স্পষ্ট হয়ে গেছিল, যে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য দান খয়রাতিতে রাজি নয় সরকার। তাহলে কি রেলের বেসরকারিকরণের যে আশঙ্কা বিরোধীরা করছে মোদি সরকারের নেওয়া একের পর এক স্টেপই কার্যত তাতে অক্সিজেন যোগাচ্ছে? প্রশ্নটা আরো বেশি করে জোরালো হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে।
সত্যিই তো যদি ভেবে দেখা যায়, দেখুন তো জার্নিটা। কোথা থেকে কোথায় এসেছে রেল! ১৮৫৩ সালে ভারতে রেলের যাত্রা শুরু। এখনো সারা দেশের সাধারণ মানুষের অধিকাংশেরই প্রথম পছন্দ রেলযাত্রা। অথচ, কম পয়সায় স্বচ্ছন্দে যাত্রার জন্য যে রেল মানুষের ফার্স্ট চয়েস, সেটাই দিন দিন গরীব মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। প্রবীণ নাগরিকদের ছাড় দেওয়া উঠেছে লাটে। সেসব ফেরানোর নামগন্ধ নেই। অথচ রেলমন্ত্রীর সাফাই, প্রতি টিকিটে যাত্রি পিছু নাকি ৪৬ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য সরকারকে বছরে নাকি ৫৬ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা ভর্তুকিও দিতে হয়।
যদিও এসব তথ্য মানতে নারাজ বিরোধীরা। তারা বলছেন, সাধারণ নাগরিকদের প্রতি কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা রয়েছে রেলের! সেটা কি ভুলতে বসেছে ভারতীয় রেল? পাশাপাশি তো রয়েইছে রেলে যাত্রীর স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তার অভাব। দুর্ঘটনা অনেক বেড়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন সময় বিরোধী দলের সংসদরা। কিন্তু কোথায় কি?
দুর্ঘটনাও ঘটছে, শয়ে শয়ে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। শুধু সাধারণ মানুষ না, রেলকর্মীদেরও প্রাণ যাচ্ছে। জখম বহু। প্রচুর ট্রেন বেলাইন হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এই সবদিক বিচার বিবেচনা করে বিরোধীরা দাবি তুলছেন, রেলের ছাড় ফের চালু করা হোক। অতিমারির আগে যেমন প্রবীণ পুরুষ নাগরিকদের দূরপাল্লার ট্রেনে ৪০ শতাংশ এবং প্রবীণ মহিলাদের ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হতো সেটা আবার ফিরিয়ে আনা হোক।
একইসঙ্গে যাত্রী সুরক্ষা ও যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের দিকে আরো বেশি করে নজর দিক রেল! আরো বেশি যত্নশীল হতে বলা হচ্ছে রেলকে। সঙ্গে কর্মীসংখ্যা কমানোর বদলে শূণ্যপদ পূরণেরও দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু মোদি সরকারের যা মতিগতি, তাতে কি রেলের বেসরকারিকরণ হতে পারে, এমন ধারণা ছাড়া অন্য কোনো ভাবনা মাথায় আসছে সাধারণ মানুষের?
বিরোধীদের একের পর এক দাবি এবং সেই দাবীকে মান্যতা না দেওয়া, যদি এটাই রেলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তাহলে অনেকেই বলছেন, ধরে নিতে হবে রেলকে বেসরকারি সংস্থার হাতেই তুলে দিতে চাইছে মোদি সরকার। যার পরিণাম মোটেই ভালো নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন