সমকালীন প্রতিবেদন : ভারত–বাংলাদেশ টানাপোড়েনের মাঝে একটা বৈঠক! অঙ্কের হিসেব ঘুরলো? ঢাকা–দিল্লি বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক কোন অ্যাঙ্গেলে মোড় নিল? এবার বাংলাদেশে কতটা সেফ সংখ্যালঘু হিন্দুরা? সাম্প্রতিক অশান্তি নিয়ে আলোচনায় কি সিদ্ধান্ত হলো? এই বৈঠক নিয়ে আশাপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু সেই কাজ কতটা এগোল? দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের সমীকরণ কতটা স্বাভাবিক হলো? প্ল্যান এ'তেই সাকসেসফুল? নাকি বি' নিয়েও ভাবতে হবে দিল্লিকে? সেটা সময়ই বলবে।
এমনিতেই হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রথম ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক স্তরে বৈঠক। একই সাথে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, সেই আবহে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হল। সবদিক থেকেই ভারত-বাংলাদেশ বিদেশ সচিব স্তরের এই বৈঠক ছিল যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। সোমবার যে বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় পৌঁছান ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি।
কিন্তু ঢাকাতে পা দিয়েও সুর নরম করলেন না ভারতের বিদেশ সচিব। হিন্দুদের নিয়েও দিলেন স্পষ্ট বার্তা। সরকারি সূত্রে খবর, বৈঠকে সামগ্রিকভাবে দুদেশের পারস্পরিক একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। তবে অন্যান্য সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, বিদেশ সচিবদের আলোচনার সিংহভাগই সাম্প্রতিক অশান্ত পরিস্থিতি। এতদিন যে বার্তা ভারত দিয়ে আসছিল, সেটা নিজে ঢাকায় গিয়ে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মহম্মদ জসিমউদ্দিনকে জানালেন মিশ্রি।
বাংলাদেশে হিন্দু-সহ সংখ্যালঘুদের উপরে যে ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশের বুকে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক জায়গায় যে সব হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে, তা নিয়েও রয়েছে উৎকণ্ঠা। তাই, ভারতের বিদেশ সচিব আলোচনায় এই পয়েন্টগুলোর উপরেই বিশেষভাবে ফোকাস করেছেন। সঙ্গে আশাপ্রকাশ করেছেন, ভারত যে যে বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তা নিয়ে গঠনমূলক পদক্ষেপ করবে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
জানা দরকার, মিষ্টি কথায় ভারত বাংলাদেশকে ঠিক কোন মেসেজ দিতে চাইল প্রপার অ্যাকশন নেওয়ার আগে। মিশ্রির কথায়, 'আজ খোলামেলা আলোচনা হল। আমি জোর দিয়ে এটা বলেছি যে বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক, গঠনমূলক, পরস্পরের জন্য হিতকর সম্পর্ক চায় ভারত।' কিন্তু প্রশ্ন হল, এরপরেও কি পরিস্থিতি বদলাবে? অশান্তি থেমে যাবে?
সোমবারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন অনেকটা প্রশমিত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিদেশ উপদেষ্টা মহম্মদ তৌহিদ হোসেন। বলেছেন, “আমি বিশ্বাস করি, ঢাকা-নয়াদিল্লি স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আর এফওসি সেদিকে এগোনোর প্রথম পদক্ষেপ। এফওসির মধ্যে দিয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাস্তবসম্মতভাবেই এগিয়ে যেতে পারে।”
কিন্তু ভারতের বিদেশ সচিব মিশ্রির একটা কথা মনে দাগ কেটে গেল। "আজ যে খোলামেলা এবং গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে, তা ভারত এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আজকের আলোচনার প্রশংসা করছি" বলেছেন তিনি। তাই এখন দেখার এই গঠনমূলক আলোচনার ফলাফল কি হয়।
পাশাপাশি হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়েও কোনো কথা হয়েছে কিনা, এদিনের এই বৈঠকে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। কারণ, দু'ঘণ্টার ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গে কোনও আলোচনা হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানাননি ভারতের বিদেশ সচিব। যিনি ভারতীয় বায়ুসেনার বিমানে ঢাকায় পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা আগেই ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছিলেন যে, হাসিনাকে ভারত থেকে প্রত্যর্পণ করানোর পথে হাঁটবে বাংলাদেশ সরকার। সেইজন্য আইনি প্রক্রিয়াও চলছে। সেই প্রত্যর্পণের বিষয়ে বাংলাদেশের বিদেশ সচিব কিছু বলেছেন কিনা, সেটা কার্যত ধোঁয়াশাই থেকে গেল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন