সমকালীন প্রতিবেদন : পঞ্চব্যাঞ্জন, উলুধ্বনি, বেলুন, ফুলের মালায় সাজানো চারিদিক। আইবুড়োভাতের একেবারে এলাহী আয়োজন। কিন্তু বাড়িতে নয়। সবটাই হলো ট্রেনের কামরায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বনগাঁ লোকালে শুভেন্দুর আইবুড়োভাতের সেই ভিডিও।
বনগাঁর নতুনগ্রামের বাসিন্দা বছর ২৭ এর শুভেন্দু চক্রবর্তী। জানুয়ারি মাসে কাঁচরাপাড়ার পাত্রীর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবেন বলে সবটা ঠিকঠাক। তাই বিয়ের আগে ঘটা করে পাত্রকে আইবুড়োভাত খাওয়ানোর পর্ব চলছে। যে শুভেন্দু বনগাঁ-শিয়ালদা শাখায় প্রতিদিন সকাল ৮টা ৮ এর ট্রেন ধরেন।
অনেকেই হয়তো জানেন, নিত্যযাত্রীদের কাছে লোকাল ট্রেনের নির্দিষ্ট কামরা অনেকটা বাড়ির মতোই। নাম, পরিচয়, পেশা বড় কথা নয়। রোজকার দেখাশোনায় মুখ চেনা কতো মানুষ এই ট্রেনের কামড়াতেই কত আপন হয়ে ওঠে। আসলে অফিসে যেতে-আসতে অনেকটা সময় কাটে এখানেই। প্রতিদিনের যাত্রা পথে নির্দিষ্ট কামরায় ওঠা যাত্রীরা হয়ে ওঠেন 'পরিবারে'র সদস্য।
শুভেন্দু চক্রবর্তীও তার সহযাত্রীদের কাছে তেমনই একজন পরিবারের সদস্য। চার মাস ধরে যাতায়াত করছেন তিনি। তাই রোজনামচার জীবনে নিত্য যাওয়া আসার পথে শুভেন্দুর সঙ্গে গড়ে উঠেছে অন্য ট্রেনযাত্রীদের বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্বের কারণেই, সহযাত্রীরা সাজালেন ট্রেনের কামরা। হ্যাঁ, ট্রেনেই তাঁকে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেন সহযাত্রী বন্ধুরা।
যেমন ভাবনা তেমন কাজ! শুভেন্দু ট্রেন ধরার আগেই ফুল, বেলুনে ট্রেনের নির্দিষ্ট কামরা একাকার। অবশেষে কর্মস্থলে যাওয়ার পোশাক খুলিয়ে শুভেন্দুকে পড়ানো হল পাঞ্জাবি, মাথায় দেওয়া হল টোপরও। এক ঝলক দেখলে ধ্বন্ধে পড়ে যাবেন আইবুড়ো ভাত, নাকি বিয়ে! খাবারের আয়োজনেও কোনও খামতি ছিল না।
মেনুতে সাদা ভাত, পাঁচ রকম ভাজা, কচু শাক, মাছের মাথা, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, পমফ্রেট, মটন কষা, চাটনি, পাপড়, মিষ্টি, পান। দুর্দান্ত অ্যারেঞ্জমেন্ট দেখে শুভেন্দুই অবাক। সহযাত্রীরা হবু বরকে শুভেচ্ছা জানালেন। দিলেন উপহারও। রক্তের সম্পর্ক বড় কথা নয়, আরো একবার প্রমাণ হয়ে গেল এদিন।
কয়েক মাস, কয়েক বছরের মুখ চেনা সম্পর্কই সবকিছুকে ছাপিয়ে গেল ট্রেনের কামরায়। একেই বোধহয় বলে সারপ্রাইজ। হইহই করে কেটে গেল দিন। এবার শুধু জানুয়ারির ২৪ তারিখের অপেক্ষা। ওই দিনই যে শুভেন্দুর বিয়ে। সেদিন বরযাত্রী হবেন ট্রেনের এই সহযাত্রীরাও। সেটা হবে আরেক গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন