সমকালীন প্রতিবেদন : বেসন, যা মূলত ছোলার ডাল থেকে প্রস্তুত করা হয়। এটি একটি বহুমুখী উপাদান, যা খাদ্য থেকে শুরু করে ত্বকের যত্ন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। এটি শুধু স্বাদের জন্যই নয়, পুষ্টিগুণ ও কার্যকারিতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বেসন বহুকাল ধরেই স্কিনের যত্ন নিয়ে আসছে। সেই মা, ঠাকুমার যুগ থেকেই প্রসাধনের অন্যতম উপাদান ছিল বেসন, হলুদ, চন্দন।
বেসনের খাদ্যগুণ –
বেসন প্রোটিন, আঁশ, এবং বিভিন্ন খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি গমের ময়দার তুলনায় স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
প্রোটিন : বেসন উচ্চমাত্রার প্রোটিন সরবরাহ করে, যা পেশি গঠনে সহায়ক।
আঁশ : এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স : রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
চর্বি কম : ওজন কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
ত্বকের যত্নে বেসনের ব্যবহার –
বেসন দীর্ঘদিন ধরে ত্বক পরিচর্যার একটি প্রাকৃতিক উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
১/ ক্লিনজার : এটি ত্বকের গভীর থেকে ময়লা দূর করে।
২/ এক্সফোলিয়েটর : বেসনের স্ক্রাব মৃত কোষ সরিয়ে ত্বক মসৃণ করে।
৩/ ফেস প্যাক : দুধ, মধু বা হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে এটি ত্বক উজ্জ্বল করে।
৪/ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য : অতিরিক্ত তেল শোষণ করে ত্বককে ফ্রেশ রাখে।
৫/ ব্রণ দূরীকরণ : এতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে।
রূপচর্চার ক্ষেত্রে বেসন ব্যবহারের পাঁচটা টিপস –
১) ২ চামচ বেসনের সঙ্গে অল্প হলুদ ও গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন। সমস্ত মুখে ওই পেস্ট লাগিয়ে ১৫/১৬ মিনিট রেখে ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলুন। পরপর ৩ দিন লাগলে ত্বকের ব্রণ দূর হবে। আয়ুর্বেদ আচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য্য মনে করেন, এটি মুখের ব্রণ দূর করার অন্যতম উপায়।
২) অনেকেই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বিরক্ত। তাদের অন্যতম ফেসপ্যাক হলো ২ চামচ মুলতানি মাটি, ১ চামচ বেসন গোলাপ জলে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে ১০/১২ মিনিট রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। মুলতানি মাটি মুখের ময়লা দূর করে ও তৈলাক্ত ভাব দূর করে। এক্ষেত্রেও পর পর ৩ দিন ব্যবহার করুন। ১৫ দিন পর পর করে যাবেন।
৩) অনেকের মুখেই হালকা দাগ থাকে। সেই দাগ নিয়ে অস্বস্তি বোধ করেন। সেক্ষেত্রে ২ চামচ বেসন, অর্ধেক পাতিলেবুর রস, ২ চামচ টক দই দিয়ে পেস্ট তৈরি করে ১০/১২ মিনিট মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ৩/৪ দিন পর পর কয়েকবার লাগালেই উপকার বুঝতে পারবেন।
৪) সারাদিন যারা বাইরে কাজ করেন, তাদের নাকে, থুতনি ও গালে ব্ল্যাকহেড দেখা যায়। সাধারণ সাবানে ওঠে না। তারা ২ চামচ বেসন, ৪/৫ চামচ পাকা পেঁপের পেস্ট ও অল্প গোলাপ জল মিশিয়ে সমস্ত মুখে মেখে মিনিট ১৫ পরে ধুয়ে ফেলুন। ব্ল্যাকহেড চলে যাবে।
৫) যাদের শুষ্ক ত্বক, তাদের জন্য পরামর্শ হলো ২ চামচ বেসন, অল্প পাকা কলা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ১০/১২ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
অন্যান্য ব্যবহার –
চুলের যত্নে : বেসন দিয়ে চুল ধোয়া চুল ঝলমলে এবং শক্তিশালী করে।
শিশুর ত্বক পরিচর্যায় : প্রাকৃতিক এবং নরম গুণের কারণে এটি শিশুর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য আদর্শ।
সতর্কতা –
যদিও বেসন সাধারণত নিরাপদ, কিছু মানুষের ছোলার ডালের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
বেসন প্রাকৃতিক গুণাবলীতে সমৃদ্ধ এবং খাদ্য ও প্রসাধনী উভয় ক্ষেত্রেই উপকারী। এটি স্বাস্থ্যের উন্নতি, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং দৈনন্দিন জীবনে সহজলভ্য উপাদান হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন