সমকালীন প্রতিবেদন : শ্বশুরবাড়িতে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল এক গৃহবধূর। কলপাড়ে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লেগে মৃত্যু হয়েছে বলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা দাবি করলেও পরিবেশ পরিস্থিতি দেখে বধূর বাপেরবাড়ির লোকেদের সন্দেহ, তাঁকে খুন করা হয়েছে। এইমর্মে থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ায় বধূর স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বনগাঁ থানার কলেজপাড়া এলাকার এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বনগাঁর কলেজপাড়া এলাকার যুবক প্রণব মুখার্জি ওরফে খোকার সঙ্গে বছর ১৫ আগে সামাজিক নিয়ম মেনেই বিয়ে হয় মৌমিতা মুখার্জী নামে বনগাঁরই এক যুবতীর। বিয়ের পর থেকে আর্থিক কারণে মৌমিতার উপর তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা নানাভাবে অত্যাচার করতো। তবে মৌমিতা সংসারের শান্তির কথা ভেবে সবকিছু সহ্য করে যেতেন।
তাঁর বাপেরবাড়ির লোকেরা একসময় জানতে পারেন যে, মৌমিতার স্বামী বিভিন্ন জায়গা থেকে মৌমিতাকে দিয়ে টাকা ধার করিয়ে আনাতো। পাওনাদারেরা পরবর্তীতে সেই টাকা চাইতে বাড়িতে এলে, তাদের সামনেই মৌমিতাকে মারধোর করতো তাঁর স্বামী। এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে তাঁর উপর অত্যাচার চলছিল বলে অভিযোগ।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে মৌমিতার শ্বশুরবাড়ি এলাকার প্রতিবেশীরা ফোন করে মৌমিতার বাপের বাড়িতে খবর দেন যে, মৌমিতা হাসপাতালে ভর্তি। সেই খবর পেয়ে তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছান। আর সেখান থেকে জানতে পারেন যে, মৌমিতার মৃত্যু হয়েছে। অথচ তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা তাঁদেরকে কোনও খবরই দেয় নি। আর তখন থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধে তাঁদের।
এরপর তাঁরা মৌমিতার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখেন, মৌমিতার খাটেই তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা দিব্বি ঘুমিয়ে আছে। অনেক ডাকাডাকির পর ঘুম থেকে উঠে তাঁদেরকে দেখে কান্না জুড়ে দেয়। তারা জানায়, কলপাড়ে কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লেগে মারা গেছে মৌমিতা। কিন্তু তাদের এই যুক্তি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি তাঁদের।
তাঁরা তখন বনগাঁ থানায় গিয়ে মৃত্যুর আসল কারণ জানার চেষ্টা করেন। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন যে, থানার আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমিতার স্বামী প্রণব। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের দেখে সেখান থেকে একপ্রকার পালিয়ে যায় সে। সবকিছু দেখেশুনে মৌমিতার বাপেরবাড়ির লোকেদের অনুমান, মৌমিতাকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুন করেছে।
এইমর্মে এরপর মৌমিতার বাপেরবাড়ির লোকেরা বনগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মৌমিতার স্বামী প্রণবকে গ্রেপ্তার করেছে। মৌমিতার মৃত্যুর আসল কারণ জানতে মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। মৌমিতার এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের দায়ী করে অভিযুক্তদের চরম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন মৌমিতার মা।
এদিকে, মৌমিতার প্রতিবেশী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন মৌমিতা। ঘটনার দিন কলপাড়ে কাজ করার সময় তিনি আচমকাই পড়ে যান। এরপর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। গোটা বিষয়টি নিয়ে আপাতত ধোঁয়াশা রয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে দেখছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন