Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪

জগদ্ধাত্রী পুজোর ইতিহাস ও গুরুত্ব

 ‌

Jagaddhatri-Puja

সমকালীন প্রতিবেদন : জগদ্ধাত্রী পুজো পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে পালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু উৎসব। এটি দুর্গাপুজোর পরবর্তী সময়ে পালিত হয় এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটি বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। এই পুজোর প্রধান উপাস্য দেবী হলেন জগদ্ধাত্রী, যিনি শক্তি এবং মায়ের প্রতীক হিসেবে পূজিত হন। ইতিহাস, আয়োজন এবং পুজোর গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত জানুন এই প্রতিবেদনে।

জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রাচীন ইতিহাস -

জগদ্ধাত্রী পুজোর সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া কঠিন হলেও ধারণা করা হয়, এটি মধ্যযুগে বাংলায় প্রচলিত হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে এবং হুগলীর চন্দননগরে এই পুজো অতিমাত্রায় জনপ্রিয়। কথিত আছে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় প্রথম এই পুজো শুরু করেন। ১৭৫০ সালের দিকে, যখন বাংলায় নবাবের প্রভাব ছিল, তখন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর রাজ্যের ভেতর শক্তি পুজো এবং দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা শুরু করেন। এই পুজোর মাধ্যমে রাজার উদ্দেশ্য ছিল জনগণের মঙ্গলের জন্য দেবীর আশীর্বাদ লাভ করা।

জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন ও গুরুত্ব-

জগদ্ধাত্রী পুজো মূলত দুর্গাপুজোর অনুরূপ হলেও এর কিছু পার্থক্য রয়েছে। দেবী জগদ্ধাত্রীকে সিংহবাহিনী, ত্রিনয়নী এবং চার হাতবিশিষ্টা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। তাঁর এক হাতে শঙ্খ, এক হাতে চক্র, অন্য হাতে ধনুক এবং চতুর্থ হাতে বজ্র রয়েছে। দেবীকে যে ভঙ্গিতে পুজো করা হয়, তাতে তাঁর শক্তি এবং সৌন্দর্যের সমন্বয় দেখা যায়, যা ভক্তদের মনে বিশেষ প্রভাব ফেলে।

পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগর, কৃষ্ণনগর, এবং হুগলির বিভিন্ন অঞ্চলে জগদ্ধাত্রী পুজো খুবই জমকালোভাবে উদযাপিত হয়। বিশেষত চন্দননগরে এই পুজোতে চমৎকার আলোকসজ্জা এবং মৃৎশিল্পের জন্য সারা দেশ থেকে বহু দর্শনার্থী আসেন। এখানকার আলোকসজ্জা এবং মণ্ডপের নকশা দেশজুড়ে খ্যাত।

জগদ্ধাত্রী পুজোর আচার ও রীতি-

জগদ্ধাত্রী পুজোয় দেবীকে ভক্তিভরে সাজিয়ে অষ্টমী তিথি থেকে চতুর্থী অবধি দেবীকে উপাসনা করা হয়। পুজোর দিনগুলিতে দেবীকে বিশেষ সাজে সাজানো হয় এবং ভক্তরা তাঁর চরণে ফুল, ফল এবং মিষ্টি নিবেদন করেন। নৈবেদ্য, সন্ধি পুজো, এবং প্রসাদ বিতরণ উৎসবের বিশেষ অংশ।

জগদ্ধাত্রী পুজোর সাংস্কৃতিক গুরুত্ব-

জগদ্ধাত্রী পুজো শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই পুজোতে স্থানীয় শিল্পী, কারিগর এবং ব্যবসায়ীরা তাঁদের প্রতিভা ও পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পান। চন্দননগরের আলোকসজ্জা ও শিল্পকর্ম ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশংসিত হয়। এছাড়া, এই পুজোর মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ একত্রিত হয়ে উৎসবে অংশ নেন, যা সামাজিক একাত্মতার বার্তা বহন করে।

আধুনিককালে জগদ্ধাত্রী পুজো-

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে জগদ্ধাত্রী পুজো আরও বিস্তৃত আকারে পালিত হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আলোকসজ্জা এবং মণ্ডপসজ্জায় আধুনিক ধারা যুক্ত হয়েছে। প্রতিমা তৈরির ক্ষেত্রে মৃৎশিল্পীরা তাদের সৃজনশীলতা প্রদর্শন করছেন, যা প্রতিমার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এইভাবে, জগদ্ধাত্রী পুজো পশ্চিমবঙ্গে এক বিশেষ ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পরিচয় বহন করছে। এটি বাংলার জনগণের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং আত্মার অঙ্গ।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন