সমকালীন প্রতিবেদন : ছট পুজো ভারতের অন্যতম প্রাচীন এবং বিশেষত উত্তর ভারত ও বিহার রাজ্যে প্রচলিত এক লোক-ধর্মীয় উৎসব। এটি সূর্যদেবতা এবং ছটী মাইয়াকে (প্রকৃতির শক্তি) উৎসর্গ করে পালন করা হয়। এই পুজো বিশেষত সূর্য ও জলকে কেন্দ্র করে। সাধারণত ছট পুজো কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ দিনে অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবটি মোট চার দিন ধরে চলে এবং তার বিশেষ আচারবিধি রয়েছে।
ছট পুজোর ইতিহাস ও সূচনা—
ছট পুজোর উৎপত্তি নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। অনুমান করা হয় যে, এই পুজো প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকেই প্রচলিত ছিল, যেখানে সূর্যকে শক্তি ও সাফল্যের প্রতীক হিসেবে মানা হতো। মহাভারতের কাহিনীতেও ছট পুজোর উল্লেখ আছে। কুন্তী এবং দ্রৌপদী এই পুজোর মাধ্যমে নিজেদের কামনা-বাসনার পূরণ করেছিলেন বলে বলা হয়।
পুজোর মাহাত্ম্য—
ছট পুজোতে সূর্যদেব এবং ঊষাকে আরাধনা করা হয়, কারণ সূর্যকে জীবনদায়ী শক্তি এবং প্রাচুর্যের উৎস মনে করা হয়। বলা হয়, সূর্যের আলো ও শক্তি আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য, যা জীবনের উন্নয়নে সহায়ক। ছট পুজোর মাধ্যমে ভক্তরা তাঁদের আর্থিক সমৃদ্ধি, সুস্থতা, সুখ এবং সামাজিক সমৃদ্ধি কামনা করেন।
ছট পুজোর দিনগুলির বিশেষ আচার—
১. নহায় খায় : প্রথম দিনে ভক্তরা পবিত্র গঙ্গা বা অন্য নদীতে স্নান করে নিজেদের শুদ্ধ করেন। এরপর সৎ ও নির্মল খাবার গ্রহণ করেন। এই দিন থেকে নিরামিষ খাবার খাওয়া শুরু হয়।
২. খরনা : দ্বিতীয় দিনে সারাদিন উপবাস রেখে সন্ধ্যায় খেজুরের গুড় এবং চালের রুটি প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এই দিন থেকে ৩৬ ঘণ্টার কঠোর নির্জলা উপবাসের সূচনা হয়।
৩. সন্ধ্যা অর্ঘ্য : তৃতীয় দিনে ভক্তরা পবিত্র নদীর তীরে সূর্যাস্তের সময় সূর্যদেবের কাছে অর্ঘ্য নিবেদন করেন।
৪. ভোর অর্ঘ্য : চতুর্থ এবং শেষ দিনে ভোরবেলা সূর্যোদয়ের সময় ভক্তরা দ্বিতীয়বার অর্ঘ্য নিবেদন করেন এবং পুজোর সমাপ্তি ঘটে।
উপকরণ ও প্রসাদ—
ছট পুজোর সময় বিশেষ ধরনের প্রসাদ তৈরি করা হয়, যেমন থেকুয়া, চালের লাড্ডু, গুড়, নারকেল এবং অন্যান্য ফল। এই প্রসাদগুলি নৈবেদ্য হিসেবে সূর্যদেবকে নিবেদন করা হয়।
ছট পুজোর গুরুত্ব—
ছট পুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় আচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি পরিবেশ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীকও। জল ও সূর্যকে আরাধনা করার মাধ্যমে প্রকৃতির প্রতি মানুষের কর্তব্যের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
ছট পুজো আজ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও প্রচলিত হয়েছে, বিশেষত যেখানে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডের মানুষ বসবাস করছেন। ছট পুজো সমাজে সৌহার্দ্য, ঐক্য এবং শুভকামনার প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন