সমকালীন প্রতিবেদন : হিন্দু ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে মন্দির হলো পরম পবিত্র এক স্থান। আর মন্দিরের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত হয়ে আছে ফুল, চন্দন এবং ধূপধুনো। কিন্তু এই ধূপের ধোঁয়ায় আছে মারাত্মক বিষাক্ত গ্যাস- যা একজন পুরোহিতের ফুসফুসের প্রবল ক্ষতি করছে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, জ্বলন্ত ধূপ থেকে নির্গত কার্বন–মনোক্সাইড, সালফার–ডাই–অক্সাইড ইত্যাদি বিষাক্ত গ্যাস একদম ঝাঁজরা করে দিচ্ছে মন্দিরে অনেক সময় কাটানো পুরোহিতের ফুসফুস। ধূপের বিষাক্ত ধোঁয়া তাদের ফুসফুস ছাড়খার করে দিচ্ছে।
বিশেষ করে যে সমস্ত মন্দিরে বাতাস খেলার সুযোগ কম এবং যেখানে ভক্তের সমাগম বেশি হয়, সেই সমস্ত মন্দির ভয়ঙ্কর ধোঁয়ার দূষনে ভরে থাকে। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, অধিকাংশ পুরোহিত এখন ভুগছেন সিওপিডি রোগে। আর গ্রামের দিকের পুরোহিতেরা তো জানেনই না সিওপিডি কী?
আর সেই কারণে তাদের রোগ হয়ে উঠছে আরও মারাত্মক। যখন রোগ ধরা পড়ছে, তখন করার প্রায় কিছুই থাকে না। তাছাড়া, সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে যে, ফুসফুসের সঙ্গে হার্টেরও প্রবল ক্ষতি হয় এই বিষাক্ত ধোঁয়ার কারণে।
'গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ' ৫০০ জন পুরোহিতের উপর এক সমীক্ষা করে দেখেছে, এদের মধ্যে যারা নন স্মোকার, তারাও প্রবল সিওপিডির মতো প্রাণঘাতী রোগে ভুগছেন। সমীক্ষক দলের প্রস্তাব, ধূপের বাক্সে সিগারেটের মতো সতর্কীকরণ দেওয়া হোক।
যদি এই মুহূর্তে মানুষকে সচেতন করা না যায়, তাহলে এই ধোঁয়া ভারতে ভয়ঙ্কর মারণ রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এই গবেষণায় জানানো হচ্ছে, একটি মশা মারা ধুপ সারা রাত জ্বালিয়ে রাখা মানে ১০০ সিগরেট খাওয়া। আর বদ্ধ মন্দিরে দীর্ঘ সময় ধূপ-ধুনো জ্বালিয়ে রাখা ৫০০ সিগারেট খাওয়ার সমান।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, যে পুরোহিত দিনের একটা বড়ো সময় মন্দিরে থাকেন, তার কী অবস্থা হতে পারে! সমীক্ষা জানাচ্ছে, যে ধূপের সাহায্যে পুরোহিত ঈশ্বরের কাছে যেতে চাইছেন, সেই ধূপ পুরোহিতকে মৃত্যুর কাছে নিয়ে যাচ্ছে। এই সিওপিডি এখন এইচআইভি, এইডস, ম্যালেরিয়ার থেকেও ভয়ঙ্কর।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি বছর যেখানে ৫২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এইডস–এ, সেখানে সিওপিডি তে মারা যান ৯ লাখের বেশি মানুষ। এই মুহূর্তে সরকারি স্তর থেকে সচেতনতার বার্তা না আসলে অদূর ভবিষ্যতে এই রোগ ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
যদিও ধূপ-ধুনোর সঙ্গে একটা ধর্মীয় অনুষঙ্গ যুক্ত আছে। তাই তা বন্ধ করা বেশ কঠিন কাজ। তবুও মানুষকে সচেতন করতেই হবে। এগিয়ে আসতে হবে সরকার সহ পরিবেশ সচেতন সাধারণ মানুষকেও।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন