Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন : ইতিহাস ও তাৎপর্য

 ‌

Prevalence-of-Lakshmi-Puja

সমকালীন প্রতিবেদন : লক্ষ্মী পুজো বাংলার হিন্দু সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। হিন্দু ধর্মের দেবী লক্ষ্মীকে সম্পদ, সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি এবং সুন্দরের প্রতীক হিসেবে পুজো করা হয়। বিশেষ করে, শারদীয় দুর্গাপুজোর পর লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। লক্ষ্মী পুজোর ইতিহাস এবং প্রচলন অনেক প্রাচীন এবং গভীর ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বর্ণিত।

দেবী লক্ষ্মীর পরিচয়—

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, লক্ষ্মী হলেন বিষ্ণুর পত্নী এবং তিনি সমস্ত ধনের দেবী। তার রূপ ও সৌন্দর্যের বর্ণনা বিভিন্ন পুরাণ ও ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত। তিনি চারটি বাহু নিয়ে পদ্মের উপর বসে আছেন এবং হাতে পদ্মফুল ধারণ করে আছেন, যা পবিত্রতা এবং সৌন্দর্যের প্রতীক। লক্ষ্মী কেবল ধন-সম্পদ নয়, বরং জীবনের সৌন্দর্য ও স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতীক হিসেবেও পূজিত হন।

লক্ষ্মী পূজার প্রাচীন ইতিহাস—

লক্ষ্মী পুজোর ইতিহাস প্রাচীন ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকেই ধন এবং সমৃদ্ধির দেবী হিসেবে লক্ষ্মীর পুজো করা হয়। বৈদিক যুগের পরে, পুরাণ এবং অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে লক্ষ্মীর পুজোর আরও বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। বিশেষত, "ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ" এবং "শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ" লক্ষ্মী দেবীর উদ্ভব এবং তার পুজোর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। বলা হয় যে, দেবী লক্ষ্মী সমুদ্র মন্থনের সময় ক্ষীরসমুদ্র থেকে উদ্ভূত হন এবং দেবতারা তাকে ধন-সম্পদের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

বাংলায় লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন—

বাংলায় লক্ষ্মী পুজো একটি বিশেষ আয়োজন, যা প্রধানত কোজাগরী পূর্ণিমার রাতে অনুষ্ঠিত হয়। "কোজাগরী" শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'ক' এবং 'জাগরী' শব্দ থেকে, যার অর্থ হলো "কে জেগে আছো?"। বিশ্বাস করা হয়, এই রাতে দেবী লক্ষ্মী ধনী-গরীবের ভেদাভেদ না করে সকলের গৃহে সমৃদ্ধি প্রদান করতে আগমন করেন। বিশেষত, কৃষিজীবী সমাজে এই পুজো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফসল কাটার মরসুমে, নতুন ধান, চাল, এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য দিয়ে দেবীর পুজো করা হয়।

লক্ষ্মী পুজোর আধুনিক প্রচলন—

আধুনিক সমাজেও লক্ষ্মী পুজোর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং সামাজিকভাবে এটি সমৃদ্ধি ও শুভ্রতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণযোগ্য। গ্রামাঞ্চল থেকে শহরাঞ্চল পর্যন্ত লক্ষ্মী পুজো বড় আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। ঘরের মহিলারা এই পুজোর আচার-অনুষ্ঠান পরিচালনা করে থাকেন, এবং এটি পরিবারিক ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

পুজোর আচার-অনুষ্ঠান—

লক্ষ্মী পুজোর দিনে ঘর পরিষ্কার করে বিশেষভাবে সাজানো হয়। কারণ এটি বিশ্বাস করা হয় যে, দেবী লক্ষ্মী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্য পছন্দ করেন। পুজোর সময় পদ্মফুল, ধূপ, দীপ, মিষ্টান্ন, এবং ধান-দূর্বা দিয়ে দেবীর পুজো করা হয়। অনেকেই রাত জেগে লক্ষ্মী পুজো করে থাকেন এবং মনে করেন যে, রাতে জেগে থাকলে দেবীর কৃপা লাভ করা যায়।

লক্ষ্মী পুজোর প্রচলন ও ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন এবং তাৎপর্যময়। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও বটে। লক্ষ্মী পুজোর মাধ্যমে জীবনের সৌন্দর্য, সমৃদ্ধি এবং শুভ্রতার প্রতিফলন ঘটে।‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন