Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪

কালীপুজো উৎসব পালন ও ‌তার মাহাত্ম্য

 ‌

সমকালীন প্রতিবেদন : কালীপুজো বাংলার অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এটি দীপাবলীর সময়কার উৎসব হিসেবে পালন করা হয় এবং কালীমাতার পুজোর মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ ও শুদ্ধতার আহ্বান করা হয়। কালী হিন্দুধর্মে মা দুর্গার এক উগ্র রূপ, যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্ধকার ও অশুভ শক্তিকে পরাজিত করার জন্য তীব্র শক্তি প্রদর্শন করা। কালীপুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতি নয়, বরং বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম পরিচায়ক এবং গভীর আধ্যাত্মিকতা এবং ভক্তির প্রতীক।

কালীপুজোর ইতিহাস ও উৎপত্তি :

বাংলায় কালীপুজো শুরু হয়েছিল প্রাচীনকালে। যদিও কালীপুজোর সঠিক উৎপত্তি নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে, তবুও বলা হয় যে বাংলার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং তাঁর অধস্তন রাজারাই প্রথম কালীপুজোকে জনপ্রিয় করে তোলেন। কালীপুজোকে তখন শুধুমাত্র রাজপরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হতো। পরে এই পুজো সাধারণ মানুষের মধ্যেও প্রসারিত হয়। এখন এটি ঘরে ঘরে পালিত হয়।

কালীপুজোর মাহাত্ম্য :

কালীপুজো শুধুমাত্র দেবী পুজোই নয়, বরং এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হলো অশুভ শক্তিকে দূর করা, কলুষিত মনের শুদ্ধিকরণ এবং অন্ধকারকে সরিয়ে আলোর পথে যাত্রা করা। দেবী কালীর মূর্তি দেখতে অনেকটা ভীতিপ্রদ হলেও তিনি তাঁর ভক্তদের প্রতি অত্যন্ত করুণাময়ী। তাঁর কৃপার ফলে ভক্তদের জীবনে অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কালী মাতাকে প্রায়ই মৃত্যুর দেবী হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু তাঁর আরাধনার মূল লক্ষ্য হলো নাশকতা এবং রাক্ষসদের বিনাশ করে সত্যের প্রতিষ্ঠা করা।

কালীপুজো পালন পদ্ধতি :

কালীপুজোর দিন ভক্তরা মা কালীর আরাধনা করেন পূর্ণব্রতের মাধ্যমে। তারা প্রথাগতভাবে মন্ত্রোচ্চারণ, হোম যজ্ঞ এবং বিশেষ পদ্ধতিতে দেবীর পুজো করে থাকেন। সন্ধ্যায় মন্দির এবং বাড়ির সামনে প্রদীপ জ্বালানো হয়, যা অন্ধকারকে দূর করার প্রতীক। দেবী কালীর পুজো মূলত মধ্যরাতে করা হয় এবং ভক্তরা এই সময় বিশেষ মন্ত্রোচ্চারণ এবং দেবীকে নিবেদনের মাধ্যমে তাঁকে আহ্বান করেন।

বাঙালি সংস্কৃতিতে কালীপুজোর ভূমিকা :

কালীপুজো বাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি বাঙালিদের জন্য শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনের ক্ষেত্র। এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ক্লাব এবং সামাজিক সংস্থা এই পুজোর সময় নানা ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশনা করে। এতে বাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির গভীরতা ফুটে ওঠে।

কালীপুজো বাঙালিদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্ববহ উৎসব। এটি আমাদের শিক্ষা দেয়, কীভাবে অন্ধকারকে আলোর মাধ্যমে দূর করা যায় এবং কীভাবে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে জীবনের পূর্ণতায় পৌঁছানো যায়। কালীপুজোর মাহাত্ম্য এই যে, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শুভ ও শুদ্ধ শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা জাগায়।‌





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন