সমকালীন প্রতিবেদন : টানা পাঁচ ঘন্টার বেশি সময় ধরে বৈঠকের পর অবশেষে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের অনেক দাবিই মেনে নিল রাজ্য সরকার। দাবি মেনে সরানো হচ্ছে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েল, ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তা, রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তাকেও। বৈঠক শেষে গভীর রাতে সাংবাদিকদের এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৩৭ দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। গত সাত দিন ধরে তাঁরা স্বাস্থ্য ভবন এর সামনে অবস্থান বিক্ষোভ করছেন। তারই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগদানের আবেদন জানিয়ে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয় রাজ্য সরকার। কিন্তু নানা কারণে সেই বৈঠক বার বার ভেস্তে যায়। অবশেষে পঞ্চমবারের মাথায় সোমবার এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে। সন্ধ্যা ছয়টা চল্লিশ মিনিট নাগাদ জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি দলকে নিয়ে সেই বৈঠক শুরু হয়।
পাঁচ ঘন্টার বেশি সময় ধরে চলা এই বৈঠকে কিছু বিষয়ে সহমত হলেও ধোঁয়াশা রয়ে গেছে অনেকক্ষেত্রে। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এমনটাই জানিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। রাজ্য সরকার মেনে নিয়েছেন বলে জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। বৈঠক শেষে তৈরি হওয়া মিনিটসে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতিনিধি হিসেবে ৪২ জন সই করেছেন। রাজ্যের পক্ষ থেকে মুখ্যসচিব সই করেছেন।
বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে জানান, 'জুনিয়র চিকিৎসকেরা অনেক ইস্যু তুলেছেন, আমরাও আমাদের বক্তব্য রেখেছি। সিবিআই এই কেসের তদন্ত করছে। স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার অপসারণের দাবি ছিল ওঁদের। স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তাই তাঁদের সরানো হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টের পর কলকাতা পুলিশের কমিশনার বদল হবে। নতুন কমিশনারকে দায়িত্ব দেবেন বিনীত গোয়েল। বিনীত যেখানে কাজ করতে চেয়েছেন, সেখানেই তাঁকে দেওয়া হচ্ছে। বিনীত ডাক্তারদের কথা মেনে নিয়েছেন। ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তাকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। মুখ্যসচিবের অধীনে একটি কমিটি হবে। সেই কমিটিতে অভিযোগ জানাবেন ডাক্তাররা।'
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জুনিয়র চিকিৎসকেরা বলেন, 'আমাদের ৫ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয়ে সদর্থক আলোচনা হলেও বেশ কিছু জায়গায় ধোঁয়াশা রয়েছে। কিছু বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। অনেক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হলেও সব বিষয়ে জট কাটেনি'। বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলি কার্যকরী না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন