সমকালীন প্রতিবেদন : কাজে যোগদান তো দূর অস্ত। অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের পথে রইলেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্য ভবনের 'ঘুঘুর বাসা' ভাঙতে অবস্থানে বসে রয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। নিজেদের দাবি না মেটা পর্যন্ত তারা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন। আন্দোলনের প্রস্তুতি দেখে এদিন স্পষ্ট হল যে, তাঁদের আন্দোলন দীর্ঘতর হচ্ছে।
আরজি কর কাণ্ড নিয়ে সোমবার শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টে। আর সেই শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যেই জুনিয়র চিকিৎসকেরা যেন তাঁদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগদান করেন। না হলে রাজ্য সরকার যদি তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে সুপ্রিম কোর্টের কিছু করার থাকবে না।
এই নির্দেশে আরো বেশি মানসিকভাবে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের অভিযোগ, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে ভুল বোঝানো হচ্ছে, ভুল তথ্য সুপ্রিম কোর্টে পরিবেশন করা হচ্ছে। আর এই পরিস্থিতিতে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাঁদের ৬ দফা দাবি পূরণ হবে, ততক্ষণ তাঁরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
নিজেদের দাবির সমর্থনে মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্য ভবন অভিযানে নামেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্য ভবন থেকে ১০০ মিটার আগেই তাঁদের এই মিছিল আটকে দেওয়া হয়। আর সেখানেই অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে এই অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল হন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁরা দাবি তোলেন, আরজি কর কান্ডের সঠিক বিচার এবং স্বাস্থ্য ভবনের ঘুঘুর বাসা ভাঙার।
এদিন মানুষের চোখ এবং মস্তিষ্কের রেপ্লিকা সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনে শামিল হন। এব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য, সাধারণ মানুষ যে চোখ দিয়ে, যে মস্তিষ্ক দিয়ে আরজি কর কান্ড দেখছেন বা বিচার বিবেচনা করছেন, রাজ্য সরকার বা তার প্রশাসন সেই চোখ বা মস্তিষ্ক দিয়ে দেখছে না। তাদের সঠিক দৃষ্টি এবং বিচারবুদ্ধি ফেরানোর জন্য চোখ এবং মস্তিষ্কের এই রেপ্লিকা নিয়ে আসা হয়েছে।
এদিন বিকেল পাঁচটা বাজতেই আন্দোলন আরো তীব্রতর করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। আন্দোলনস্থল দিয়ে এই সময়ের পর থেকে পুলিশের কোন গাড়িকে আর যাতায়াত করতে দেওয়া হয়নি। আন্দোলনের চাপে পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশের গাড়ি। আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকেরা এদিনও কলকাতার পুলিশ কমিশনার এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরই সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন। এদিন তিনি বলেন, 'প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে কথা বলুন, কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা বিঘ্নিত করে আর আন্দোলন চালিয়ে যাবেন না। কাজে যোগদান করুন। রাজ্য সরকার কিন্তু এখনো পর্যন্ত আপনাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।'
মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তাকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ জানিয়েই নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের বক্তব্য, আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এবং স্বাস্থ্য দপ্তরের দুর্নীতি দূর না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। জুনিয়র চিকিৎসকেরা তাদের অবস্থানে অনড়, সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়সীমা পার করে মঙ্গলবার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা তারই প্রমাণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন