সমকালীন প্রতিবেদন : কৌশিকী অমাবস্যা একটি পবিত্র তিথি যা বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদা এবং গুরুত্ব বহন করে। এই দিনটি অমাবস্যার সময় পালিত হয়, যা হিন্দু পঞ্জিকায় বিশেষ অর্থ বহন করে। কৌশিকী অমাবস্যার বিশেষত্ব মূলত দেবী মহাকালী বা দেবী দূর্গার পুজোর সঙ্গে সম্পর্কিত।
কৌশিকী অমাবস্যার পটভূমি ও কাহিনী—
কৌশিকী অমাবস্যার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে। মহাভারতের সময়কালে রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সামাধি নামে দুটি ভক্ত কৌশিকী অমাবস্যার দিন মা কালীর পুজো করে আশীর্বাদ লাভ করেছিলেন। মাকালী এই দিনে অত্যন্ত প্রীত হয়ে তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন। এছাড়াও, এই তিথিটি দেবী দূর্গার 'কৌশিকী' রূপে পূজিত হওয়ার দিন হিসেবেও পরিচিত।
পুরাণ মতে, সত্য যুগে যখন শুম্ভ-নিশুম্ভের অত্যাচারে ত্রিলোক অশান্ত হয়ে পড়েছিল, তখন দেবতারা এই অসুরের হাত থেকে নিস্তারের পথ খুঁজছিলেন। সেইসময় দেবতারা এই অসুরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে এবং ভীত হয়ে অশুভ শক্তির বিনাশ এবং ত্রিলোকে শান্তি স্থাপনের জন্য দেবী পার্বতীর শরণাপন্ন হয়েছিলেন। দেবতাদের এমন দুর্দিনে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দেবী পার্বতী। সেইসময় দেবকুলকে রক্ষা করতে দেবী পার্বতী নিজের দেহকোষ থেকে সৃষ্টি করেন কালীরূপী ভয়ঙ্কর এক দেবীকে। এই দেবীকেই বলা হয় কৌশিকী দেবী। আর যে অমাবস্যা তিথিতে এই দেবীর পুজো করা হয়, সেই তিথি হল কৌশিকী অমাবস্যা তিথি।
ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও পুজো-পার্বণ—
কৌশিকী অমাবস্যার দিনটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা এই দিনে দেবী কালী বা দেবী দূর্গার বিশেষ পুজো করেন। পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ওড়িশা এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই দিনটি বিশেষ ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। অনেক ভক্ত এই দিনে উপবাস করেন এবং দেবীর মন্দিরে গিয়ে পুজার্চনা করেন।
আধ্যাত্মিক গুরুত্ব—
কৌশিকী অমাবস্যা আধ্যাত্মিক অর্থেও গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনে ধ্যান, যোগ এবং পুজোর মাধ্যমে ভক্তরা আত্মিক শান্তি এবং শক্তির সন্ধান করেন। অনেকে বিশ্বাস করেন যে, এই দিনে দেবী কালী বা দূর্গার আশীর্বাদ লাভ করলে জীবনের সমস্ত বাধা দূর হয় এবং মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়।
সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব—
কৌশিকী অমাবস্যা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও পালিত হয়। বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে, যেখানে লোকজন একত্রিত হয়ে আনন্দ উদযাপন করেন। এছাড়াও, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ধর্মীয় আলোচনাসভারও আয়োজন করা হয়।
এবছর এই তিথির শুরু এবং শেষের সময়—
গুপ্তপ্রেশ পঞ্জিকা মতে, বাংলা ১৫ ই ভাদ্র অথবা ইংরেজি ১ লা সেপ্টেম্বর অর্থাৎ রবিবার শেষরাত ৫ টা বেজে ৫ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে শুরু হচ্ছে এই তিথি। অর্থাৎ ১৬ ই ভাদ্র অথবা ২ রা সেপ্টেম্বর সোমবার অহোরাত্র অমাবস্যা থাকছে। এরপর বাংলার ১৭ ই ভাদ্র অথবা ইংরেজীর ৩ রা সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার সকাল ৬ টা বেজে ২৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডে শেষ হচ্ছে এই তিথি।
কৌশিকী অমাবস্যা একটি অত্যন্ত পবিত্র এবং মহিমান্বিত দিন যা হিন্দু সমাজে গভীর গুরুত্ব বহন করে। এই দিনটি দেবী কালী বা দেবী দূর্গার আশীর্বাদ লাভের জন্য একটি বিশেষ সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কৌশিকী অমাবস্যাকে আবার তন্ত্রশাস্ত্র মতে তন্ত্রসাধনার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসাবেও মনে করা হয়। এই দিন বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে তারাপীঠে তন্ত্রসাধকদের বেশি পরিমাণে দেখা যায়।ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে এই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন