Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ধর্ষণবিরোধী আইনের ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল’ পাস রাজ্য বিধানসভায়

 

Anti-Rape-Act-Bill

সমকালীন প্রতিবেদন : ধর্ষণবিরোধী আইনের বিল মঙ্গলবার বিধানসভায় পাস হয়ে গেল। বিরোধীপক্ষের তোলা প্রস্তাব সেই অর্থে গৃহীত হলো না বিধানসভায়। আর এই প্রসঙ্গেই বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভার ভেতরে দাঁড়িয়ে বললেন, 'গোটাটাই আইওয়াশ, রাজ্য সরকার ধর্ষকদের শাস্তি দিতে চায় না।' এদিন এই বিল পেশের সময়েই শাসক তৃণমূলের সঙ্গে তুমুল বাগবিতণ্ডা বেধে যায় বিরোধী পক্ষের।

ধর্ষকদের দ্রুত কড়া শাস্তি দিতে বিধানসভায় পেশ করা হয় ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল’ (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী বিল, ২০২৪)। মঙ্গলবার এই নিয়ে বিধানসভায় চলে আলোচনা পর্ব। বিরোধী বিধায়করা এই নিয়ে সংশোধনী প্রস্তাবে আলোচনার পর মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে ওঠেন। বক্তব্যের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, '‌৩ সেপ্টেম্বর মেয়েদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ের জন্য একটা ঐতিহাসিক দিন। ধর্ষণে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছি এই বিলে। এটা সমাজের একটা অভিশাপ। সমাজ সংস্কার প্রয়োজন।'

যদিও নারী সুরক্ষায় রাজ্য সরকারের আনা অপরাজিতা বিল ২০২৪ নিয়ে এদিন বিধানসভায় তুলকালাম কান্ড ঘটে। রাজ্যের আনা এই বিলের প্রতি সমর্থন জানালেও শাসকদল তৃণমূলের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। দ্রুত এই বিল কার্যকরের দাবি তুললেও তাড়াহুড়ো করে এই বিল পেশের পিছনে অন্য উদ্দেশ্য থাকারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। 

এই অপরাজিতা বিল নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী যে প্রস্তাবগুলি আনেন, সেগুলি হল— 

১)‌ থানা এফআইআর নিতে অস্বীকার করলে বা দেরি করলে তার সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান থাকতে হবে এই বিলে।

২)‌ তথ্যপ্রমাণ লোপাট করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা সরকারি আধিকারিকের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখা হোক।

৩)‌ ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে অযথা দেরি করলে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধেও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৪)‌ কোনও ঘটনার ক্ষেত্রে তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক বা স্বাস্থ্য পরীক্ষাকারী চিকিৎসক পরে বয়ান বদলালে শাস্তির বিধান রাখতে হবে।

৫)‌ সাক্ষ্যদান পর্ব চলাকালীন সাক্ষ্যদানকারীর নিরাপত্তা দিতে হবে।

৬)‌ এক মাসের মধ্যে বিচার শেষ করে দ্রুত শাস্তি কার্যকর করতে হবে।

শুভেন্দু অধিকারী এদিন বিধানসভায় বলেন, 'রাজ্য সরকারের আনা এই বিলকে আমরা সমর্থন করছি। কিন্তু এই বিল আনতে এত তাড়াহুড়ো করা হল কেন? আমরা চাইলে বলতেই পারতাম যে, সিলেক্ট কমিটিতে আগে পাঠান। সেই কারণেই ভোটাভুটি চাইব না। এই বিল দ্রুত কার্যকর করতে হবে সরকারকে। তবে সবকিছু দেখে মনে হচ্ছে, ধর্ষণে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার কোনও সদিচ্ছা নেই সরকারের। পুরোটাই লোক দেখানো।'‌ 

এদিন বিধানসভায় অধিবেশন চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেন বিজেপি বিধায়কেরা। বিল সম্পর্কে মমতা ব্যানার্জী এদিন বলেন, 'সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ডের বিধান আনা হয়েছে এই বিলে। আদালতের অনুমতি ছাড়া মহিলা ও শিশুর পরিচয় যাতে সামনে না আসে, সেটাও বিলে বলা হয়েছে। এই ক্ষেত্রেও ৩-৫ বছরের সাজার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।'‌ মমতা বলেন, 'দেশে ধর্ষণের মতো ঘটনায় শাস্তির সংখ্য়া খুব কম। ৭৬ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত করে চার্জশিট পেশ করেছে। মাত্র ২.৫৬ শতাংশ ক্ষেত্রে অপরাধী দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।'

‌উল্লেখ্য, আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নারকীয় ঘটনা নাড়া দিয়ে গিয়েছে গোটা দেশকে। কর্তব্যরত অবস্থায় তরুণী চিকিৎসকের এমন নৃশংস খুনের প্রতিবাদে এখনও উত্তাল পরিস্থিতি রাজ্যের কোনায় কোনায়। দোষীদের শাস্তির দাবিতে ফি দিন চলছে বিক্ষোভ, আন্দোলন। মঙ্গলবারও বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী সহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ইএম বাইপাসের ধারে রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রেখে বেলেঘাটা থেকে পাটুলি পর্যন্ত মানবশৃঙ্খল তৈরি করে বিচারের দাবিতে সরব হন। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন